উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

ইংল্যান্ডও যেভাবে বাদ পড়তে পারে...

আজহারুল ইসলাম

৬ নভেম্বর ২০২১

ইংল্যান্ডও যেভাবে বাদ পড়তে পারে...

টানা চার ম্যাচ জেতায় ইংল্যান্ড সেমিফাইনালে উঠে গেছে বলেই ধরে নিয়েছেন সবাই। কিন্তু আজ এক নম্বর গ্রুপের শেষ দুই ম্যাচে মহানাটকীয় কিছু ঘটলে ইংল্যান্ডেরও কিন্তু বাদ পড়ার সম্ভাবনা আছে! `মহানাটকীয়` মানেই তা ঘটার সম্ভাবনা খুব কম। আজ অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের আগে `কী হইলে কী হইবে` এমন একটা আলোচনা তো হতেই পারে।

এক নম্বর গ্রুপে আপাত দৃষ্টিতে ইংল্যান্ড এক পা সেমিফাইনালে দিয়ে রেখেছে মনে হলেও ইংল্যান্ডের সেমিফাইনাল কিন্তু এখনো নিশ্চিত নয়। তবে এটাও ঠিক যে, গ্রুপের বাকি দুই ম্যাচে অতি নাটকীয় কিছু ঘটলেই শুধু ইংল্যান্ড বাদ পড়তে পারে। তাই বাস্তবতা বিচারে ইংল্যান্ডকে ‘অটোপাস’ দিয়ে বাকি জায়গাটার জন্য অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার সম্ভাবনার কথা হিসাব করা যাক। দুই দলেরই একটা করে ম্যাচ বাকি। আপাতত সম্ভাবনা অস্ট্রেলিয়ার বেশি, সেটা শুধু নেট রান রেটের জন্য নয়, শেষ ম্যাচের প্রতিপক্ষ বিবেচনাতেও। দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ ম্যাচ টানা চার ম্যাচ জেতা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। আর অস্ট্রেলিয়া খেলবে ইতোমধ্যে বিদায় নেওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ব্যাপারটা এমন দাঁড়াচ্ছে যে, ইংল্যান্ড হেরেও টিকে যেতে পারে, আবার অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা জিতেও বাদ পড়তে পারে।  
  
‘কী হইলে কী হইবে’ জাতীয় কৌতূহল মেটানোর জন্য নিচের কয়েকটা চিত্র কল্পনা করা যেতে পারে:

১. ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার জয়:
সেক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই ইংল্যান্ডকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন মেনে অস্ট্রেলিয়া সেমিতে যাচ্ছে। 

২. ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার পরাজয়:
ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকা সেমিতে যাবে। দক্ষিণ আফ্রিকা যদি অন্তত ৮৫ রানে জিততে পারে, বা পরে ব্যাট করে ৮ ওভারের মধ্যে খেলা শেষ করে দিতে পারে, তাহলে নেট রান রেটে ইংল্যান্ডকে টপকে তারা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে। এর কম ব্যবধানে জয়-পরাজয়ের নিষ্পত্তি হলে হেরেও ইংল্যান্ড গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে। 

৩. অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার জয়:
এটা হলে হিসাবটা জটিল হয়ে দাঁড়াবে। ৩ দলের পয়েন্ট হবে ৮। তখন বিবেচনায় আসবে নেট রান রেট। যেহেতু দক্ষিণ আফ্রিকা অন্তত ৮৫ রানের ব্যবধানে না জিতলে ইংল্যান্ডের নেট রান রেটকে অতিক্রম করতে পারছে না, ইংল্যান্ড তাই ৮৫ রানের কম (বা অন্তত ৮ ওভারের মধ্যে) না হারলেই সেমিতে উঠে যাবে। 

যদি দক্ষিণ আফ্রিকা এর কম ব্যবধানে জেতে? তখন দেখতে হবে, সেদিন দুপুরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কত ব্যবধানে হারাল। অস্ট্রেলিয়া যদি মাত্র ১ রানে জেতে, তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে জিততে হবে অন্তত ২২ রানে, বা পরে ব্যাট করলে ১৭ ওভারের মধ্যে। অস্ট্রেলিয়া যদি ১০ রানে জেতে, তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে জিততে হবে অন্তত ৩২ রানে, বা পরে ব্যাট করলে ১৬ ওভারের মধ্যে। এভাবে অস্ট্রেলিয়া যত বেশি ব্যবধানে জিতবে, দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য কাজটা তত কঠিন হয়ে যাবে।

৪. অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা দুই দলেরই পরাজয়:
সেক্ষেত্রে ইংল্যান্ড অবশ্যই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা দুই দলেরই পয়েন্ট ৬ থাকবে বলে আবার নেট রান রেট হয়ে দাঁড়াবে নির্ধারক। অস্ট্রেলিয়া যদি সর্বোচ্চ ১৬ বা ১৭ রানে হারে, তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকা হারলেই বাদ। নেট রান রেট হিসাব করার আর দরকার হবে না। অস্ট্রেলিয়া এর বেশি ব্যবধানে হারলে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য হারার পরেও সুযোগ থাকবে। ধরুন অস্ট্রেলিয়া ২৫ রানে হারল। তখন দক্ষিণ আফ্রিকা ১৬০ রান তাড়া করতে নেমে ১৫০ রানে থেমে গেলেও সেমিতে যাবে। অস্ট্রেলিয়া ৩০ রানে হারলে দক্ষিণ আফ্রিকা নির্ধারিত লক্ষ্যের ১৫ বা ১৬ রান কম করলেও টিকে যাবে। অর্থাৎ দিনের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ফিঞ্চ-ওয়ার্নাররা হারলেও বাদ পড়ছে কি না, সেটা নির্ভর করবে সন্ধ্যার ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের ওপর।  

৫. ইংল্যান্ড কি বাদ পড়তে পারে?
একেবারেই আউটসাইড চান্স হিসেবে বা অন্তত গাণিতিকভাবে ইংল্যান্ডের বাদ পড়া সম্ভব। দক্ষিণ আফ্রিকা যদি অন্তত ৮৫ রানে জেতে এবং অস্ট্রেলিয়া যদি অন্তত ৬০ রানে জেতে, তখন তিন দলেরই পয়েন্ট হয়ে যাবে ৮। দুই ম্যাচেই এরকম বিশাল ব্যবধানের ফলাফলে দক্ষিণ আফ্রিকার নেট রান রেট হবে ১.৫০১, অস্ট্রেলিয়ার ১.৪৯৩ এবং ইংল্যান্ডের ১.৪৯১। তার মানে বাদ পড়ে যাবে ইংল্যান্ড! একমাত্র এই নাটকীয়তা ছাড়া ইংল্যান্ডের আর কোনো শঙ্কা নেই। 

মোদ্দা কথা হলো, সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে ইংল্যান্ড, নিজেরা বড় ব্যবধানে না হারলে এবং একই সঙ্গে চিরশত্রু অস্ট্রেলিয়া বড় ব্যবধানে না জিতলে তাদের দুশ্চিন্তা নেই। তাই তারা অস্ট্রেলিয়ার অমঙ্গল কামনা করলেও অস্ট্রেলিয়ার কিন্তু ইংলিশদের মঙ্গল কামনা না করে উপায় নেই। অস্ট্রেলিয়া হারলে তো বটেই, জিতলেও ইংলিশদের সহায়তা লাগতে পারে। সবচেয়ে ব্যাকফুটে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের ম্যাচ বাকি একটা, কিন্তু প্রতিপক্ষ দুই দল: ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়া নিজেদের কাজটা করে বসে থাকে, সরাসরি ইংল্যান্ডকে হারালেও দক্ষিণ আফ্রিকার সেমিফাইনালে খেলা হবে না। সুতরাং, ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা এই ত্রিভূজ প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূল স্লোগান এখন একটাই—“শর্ত প্রযোজ্য”।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×