সেমিফাইনালের আগে যা জানা দরকার

উৎপলশুভ্রডটকম

৯ নভেম্বর ২০২১

সেমিফাইনালের আগে যা জানা দরকার

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এখন চার দলের টুর্নামেন্ট। সেই প্রাথমিক পর্ব দিয়ে শুরু হয়ে সুপার টুয়েলভ শেষে এখন সেমিফাইনালের অপেক্ষা। সেমিফাইনাল দুটির আগে দল চারটির অবস্থা এবং নিয়মকানুন জেনে নেওয়াটা কি ভালো না?

এবার নকআউট লড়াই। ১০ নভেম্বর আবুধাবিতে প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। পরের দিন, মানে ১১ নভেম্বর দুবাইয়ে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। দুটি ম্যাচই শুরু হবে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায়। বাংলাদেশে যখন ঘড়িতে বাজবে রাত আটটা। 

চূড়ান্ত চার
চার সেমিফাইনালিস্টের নাম তো এখন সবারই জানা: ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। সুপার টুয়েলভের কঠিন লড়াইয়ের পর এই চার দল পেয়েছে নকআউটের টিকেট। বাকি আট দলকে নিতে হয়েছে বিদায়। দুটি গ্রুপ থেকে শীর্ষ দুটি করে দল উঠেছে শেষ চারে। গ্রুপ ওয়ান থেকে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া আর গ্রুপ টু থেকে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। 

গ্রুপ ওয়ান থেকে দুই সেমিফাইনালিস্টের নাম জানতে গ্রুপের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। ম্যাচটা ছিল ইংল্যান্ড বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া সমান চারটি করে ম্যাচ জিতেছে গ্রুপ পর্বে। নেট রানরেটের কারণে ইংলিশরা পেয়েছে শীর্ষস্থান। দক্ষিণ আফ্রিকাও ঠিক চারটি ম্যাচ জিতেছিল ,কিন্তু তাদের কপাল খারাপ। নেট রানরেটের কারণে ছিটকে গেছে তারা। 

সেমিতে ওঠা চার দলের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রাখতে হবে পাকিস্তানকে। এখন পর্যন্ত তারাই একমাত্র অপরাজিত দল।নিউজিল্যান্ড জিতেছে পাঁচ ম্যাচের চারটি। নিজেদের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়ে তবেই শেষ চারের জায়গা নিশ্চিত করে তারা।

রিজার্ভ ডে
দুই সেমিফাইনালেই একটি করে রিজার্ভ ডে নির্ধারিত আছে। প্রয়োজন হলে কাজে লাগবে। অবশ্য ম্যাচ-ডেতে খেলা শেষ করতে সব চেষ্টাই করা হবে। দরকার হলে ওভার কমিয়ে খেলা শেষ করার ওপর জোর দেওয়া আছে আইনে। একটা ম্যাচের পরিণতি দিতে কমপক্ষে ৫ ওভার করে খেলা হতে হয়। সেটাও সম্ভব না হলেই শুধু ম্যাচ যাবে রিজার্ভ ডেতে। যদি নির্ধারিত সূচির দিনে কোনো কারণে একটা ম্যাচের ওভার কমে যায় এবং এদিন আর খেলা মাঠে গড়ানো সম্ভব না হয়, তা হলে রিজার্ভ ডেতে যেখানে ম্যাচ থেমেছিল সেখান থেকে শুরু হবে। 

টাই হলে
সেমিফাইনালের কোনো ম্যাচ টাই হলে সুপার ওভারের খেলা হবে। সুপার ওভারও টাই হলে জয়ী দল নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত টানা সুপার ওভারের খেলা চলবে। ব্যতিক্রমী কোনো পরিস্থিতি তৈরি না হলে রেজাল্ট পেতে যতগুলো প্রয়োজন, ততগুলো সুপার ওভার চলবে। 

টাই হওয়ার পর আবহাওয়ার কারণে সুপার ওভার শেষ হতে না পারলে কিংবা ম্যাচ পরিত্যক্ত হলে বা কোনো ফলাফল না এলে সুপার টুয়েলভের গ্রুপ পর্ব থেকে যে দল এক নম্বর হয়ে সেমিতে উঠেছে, সেটি চলে যাবে ফাইনালে। প্লেয়িং কন্ডিশন অনুযায়ী, এড়ানো যায় না এমন পরিস্থিতি যদি তৈরি হয়, যেমন নির্দিষ্ট সময়ে ফ্লাডলাইট নিভিয়ে দিতে হবে, তখন যদি অনেকগুলো সুপার ওভার করার মতো অবস্থা না থাকে, তাহলে প্রথম সুপার ওভারের আগে সম্ভাব্য সুপার ওভারের সংখ্যা সম্পর্কে ম্যাচ রেফারি দুই অধিনায়ককে জানিয়ে দেবেন। 

দলগুলো

ইংল্যান্ড: আইসিসির বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে দলটি এক নম্বর। সুপার টুয়েলভের শুরু থেকে খেলেছে দারুণ দাপট দেখিয়ে। জস বাটলার করেছেন এই আসরের প্রথম সেঞ্চুরি। শেষ দুই ম্যাচে অবশ্য টাইমাল মিলস ও জেসন রয়ের ইনজুরির শিকার হয়েছেন। এটা সেমিতে তাদের দলের ভারসাম্যে সমস্যা তৈরি করতে পারে। ৫ ম্যাচে ২৪০ রান নিয়ে ওপেনার বাটলার দলের মধ্যে সর্বোচ্চ রানের মালিক। সর্বোচ্চ স্কোর অপরাজিত ১০১। ১৫৫.৮৪ স্ট্রাইকরেটে রান করেছেন। উইকেটে সাধারণত ব্যাটসম্যানদের মানিয়ে নিতে সময় লাগছে। কিন্তু বাটলার সামান্য সময় নিয়েই আক্রমণে চলে যাচ্ছেন।

অস্ট্রেলিয়া: আইসিসির র‍্যাঙ্কিংয়ে দলটা ৬ নম্বর। এবারের আসরে তাদের শুরুটা হয়েছিল ধীর। ইংল্যান্ডের কাছে পরাজয়ে যে শুরু। কিন্তু এরপর বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দারুণ জয়ে তারা তাদের নেট রানরেট বাড়িয়ে নেয়। পরে যা কাজে এসেছে। অ্যারন ফিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নারের ওপেনিং জুটি দারুণ টাচে আছে। অস্ট্রেলিয়ার পেস অ্যাটাক নিয়মিত পারফর্ম করছে। লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পা পারফরম্যান্সে সবার বিপক্ষেই ধারাবাহিক। মাঝের ওভারগুলোতে নিয়মিত উইকেট মিলছে। প্রশ্নবিদ্ধ ফর্ম নিয়ে টুর্নামেন্টে আসা ওয়ার্নার দুটি ফিফটি করে ফেলেছেন। ১৪৪.৯৬ তাঁর স্ট্রাইকরেট। এই আসরে পাওয়ার প্লেতে রান তুলতে সবাই ভুগছে। ওয়ার্নার এই জায়গায় দলকে স্বস্তি দিচ্ছেন। 

পাকিস্তান: আইসিসির টি-টোয়েন্টি বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে তারা দুই নম্বর, কিন্তু এবারের আসরে খেলছে সবার চেয়ে ভালো। এটা তো সবার জানা যে, গ্রুপের ৫টি ম্যাচই জিতেছে পাকিস্তান। ব্যাটিং ও বোলিং দুই দিকই ভালো ক্লিক করছে ওদের। এমন একটা দল, যাদের ওপর টস কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। আগে ব্যাট করেও বড় সংগ্রহ গড়েছে তারা। অধিনায়ক ও ওপেনার বাবর আজম আইসিসির ব্যাটসম্যানদের র‍্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর। দারুণ ফর্মে থাকা বাবর এখন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও। ৫ ম্যাচের ৪টিতে ফিফটি তাঁর। মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে ওপেনিংয়ে বিপজ্জনক জুটি গড়ে তুলেছেন বাবর। উইকেট দ্রুত বুঝে নিয়ে সে অনুযায়ী ইনিংস গড়ে তোলাটা যাদের বিশেষ গুণ।

নিউজিল্যান্ড: আইসিসির বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে তারা চার নম্বর। এই দলটা প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হারার পর দুর্ধর্ষভাবে ফিরে এসে পরের চার খেলাতেই দাপটের সঙ্গে জিতেছে। দারুণ ধারাবাহিক এই দল চাপ নেয় না। উল্টো প্রতিপক্ষের ওপর চাপ তুলে দিয়ে নিজেরা নিশ্চিন্তে ম্যাচ বের করে নিয়ে যায়। টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, ইশ সোধিদের নিয়ে বোলিং অ্যাটাক দুর্দান্ত। ব্যাট হাতে মার্টিন গাপটিল টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা একটি ইনিংস খেলেছেন। বাঁহাতি পেসার বোল্ট ১১ উইকেট নিয়ে যুগ্মভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক এখন। ১০.৪৫ গড় আর ৬-এর নিচে ইকোনমি এবারের বিশ্বকাপে আলাদা করে চিনিয়ে দিচ্ছে তাঁকে।

* তথ্যসূত্র: আইসিসি

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×