রোনালদোকে পেয়ে ইউনাইটেডের অন্য লাভ-১

দ্য অ্যাথলেটিক

৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

রোনালদোকে পেয়ে ইউনাইটেডের অন্য লাভ-১

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে আসার পর `ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছে` জাতীয় একটা রব উঠেছে। কিন্তু `ঘরের ছেলে` ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে কি আর লাভ-ক্ষতির হিসাব-নিকাশ ছাড়াই ফিরিয়েছে ইউনাইটেড? মাঠের পারফরম্যান্স তো অবশ্যই বড় একটা বিবেচনা, তবে বাণিজ্যিক দিকটাও এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়। `দ্য অ্যাথলেটিক`-এরই চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে একটা লেখায়। সেটির অনূদিত রূপের প্রথম পর্ব এখানে।

গত বছরের ওই সময়টার কথা। ইউরোপিয়ান সুপার লিগ আয়োজনের পরিকল্পনা তত দিনে কেচে গিয়েছে। জুভেন্টাসের চেয়ারম্যান আন্দ্রেয়া আগ্নেল্লির কাছে তখন জানতে চাওয়া হয়েছিল, '২০১৮ সালের গ্রীষ্মে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে দলে ভেড়ানোর কারণে আপনার এখন অনুতাপ হয় কি?'

'রোনালদোকে দলে টেনে ভুল করেছি নাকি? কক্ষনো না। আমাকে আগামীকাল সুযোগ দিলে আমি আবারও একই কাজই করব', ইতালিয়ান পত্রিকা লা রিপাবলিকাকে জানিয়েছিলেন আগ্নেল্লি।

এতটা জোর দিয়ে বলাটা অবশ্য কৌতূহলের জন্মই দেয়। রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ১০০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে জুভেন্টাসে এসে তুরিনের ক্লাবটাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল রোনালদোর, কিন্তু তিনি দলকে তুলতে পারেননি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ আটের ওপরে। শেষ আট বলাটাও তো বাড়াবাড়ি, রোনালদোর তিন মৌসুমের দুবারই জুভেন্টাস বাদ পড়েছে শেষ ষোলোতে।জুভেন্টাসে যাওয়ার পর...

ঘরোয়া লিগেও জুভেন্টাসের আধিপত্য ফুরিয়েছে এই সময়টায়। প্রথম দুই মৌসুমে টানা অষ্টম আর নবম সিরি 'আ' জিতলেও গত মৌসুমটা জুভেন্টাস শেষ করেছিল চতুর্থ হয়ে। রোনালদো গোল করেছেন (১৩৪ ম্যাচে ১০১টি) সত্যি, কিন্তু আগ্নেল্লি যে অনুপ্রেরণাদায়ী চরিত্রের খোঁজ করছিলেন, তা কি রোনালদো হতে পেরেছিলেন?

তা পারেননি বলে রোনালদোতে জুভেন্টাসের বিনিয়োগকে সম্ভবত ব্যর্থই বলতে হবে। কিন্তু তবুও যে আগ্নেল্লি চোখ বুঁজে রোনালদোতেই লগ্নি করতে চাইছেন, তার কারণ, রোনালদোর প্রভাবটা উত্তর ইতালির অ্যালিয়াঞ্জ স্টেডিয়ামেই সীমাবদ্ধ ছিল না। রোনালদো গোল করুন কি না করুন, তাঁর কারণে জুভেন্টাসের কর্পোরেট রাজস্ব, জার্সি বিক্রি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুসারী, স্পন্সরশিপে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা…সব কিছুই তো তরতর করে বেড়েছিল।

তবে জুভেন্টাস এখন অতীত, রোনালদোকে নিয়ে বাণিজ্যিক পরিকল্পনা সাজানোর পরবর্তী সুযোগটা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সামনে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দলটা আগে থেকেই কর্পোরেট জগতে রাজত্ব করছিল, এবার রোনালদোকে নিয়ে রাজত্বটাকে আরও বড় কলেবর দেওয়ার চ্যালেঞ্জ তাদের সামনে।রোনালদো-জ্বর ইতোমধ্যেই টের পাওয়া যাচ্ছে ওল্ড ট্রাফোর্ডে। ছবি: গেটি ইমেজেস

কাজটা খুব একটা দুরূহ হবে বলেও মনে হয় না। ইউনাইটেডের আমেরিকান মালিক গ্লেজার পরিবারের সন্তান জোয়েল গ্লেজারই ক্লাবের খরচাপাতি নিয়ে বেশি মাথা ঘামান। যতদূর খবর বেরিয়েছে, ইউনাইটেডের নির্বাহী সহ-সভাপতি এড উডওয়ার্ড রোনালদোর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের আগেই জোয়েলের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন, তাঁকে 'রোনালদোকে দলে ভেড়ানোর গুরুত্ব ও তাৎপর্য' বুঝিয়েছেন, ক্লাবের ফিন্যান্স টিমের সঙ্গে বসে রোনালদোর প্রত্যাবর্তনে ক্লাবের পরবর্তী চুক্তিগুলোতে এর প্রভাবটা কেমন হবে, সে নকশাও এঁকেছেন। তাই বলা চলে, রোনালদোর পেছনে ব্যয়িত অর্থের পুরোটা যদি না-ও হয়, ইউনাইটেড বেশির ভাগটাই তুলে আনতে পারবে বলেই বিশ্বাস করে।

প্রাথমিকভাবে রোনালদোর সঙ্গে ইউনাইটেডের চুক্তি হয়েছে দুই বছরের। দলবদলে লেগেছে ১৫ মিলিয়ন ইউরো, সঙ্গে সাপ্তাহিক বেতন আছে সাড়ে চার লাখ পাউন্ডের। দুই বছরে ইউনাইটেডের তাই খরচ হবার কথা ৬০ মিলিয়ন পাউন্ড। চুক্তিটা অবশ্য আরও এক বছর বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে, সঙ্গে যদি বোনাস যোগ করা হয় তো রোনালদোর জন্য ইউনাইটেডের ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত খরচ হতে পারে।

কিন্তু এরই মধ্যে এই ধাক্কাটা কাটিয়ে ওঠার কিছু উপলক্ষ পেয়ে গেছে তারা। যেমন ধরুন, ক্লাবের অনুশীলন মাঠের স্পন্সরশিপের কথা। ক্লাবের ট্রেনিং গ্রাউন্ড ক্যারিংটন কমপ্লেক্সে নিজেদের নাম থাকবে বলে 'এওএন' বলে একটা ফার্ম ইউনাইটেডকে দিয়েছিল ১৮০ মিলিয়ন পাউন্ড। দুই পক্ষের আট বছরের চুক্তি শেষ হয়েছে এই গ্রীষ্মেই। আচমকাই রোনালদোর আগমন ক্যারিংটন কমপ্লেক্সের আর্থিক মূল্য বাড়িয়ে দেবে নিশ্চিত করেই। স্প্রিংস বলে একটা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে।

রোনালদোকে আবার দলে টেনে ইউনাইটেড আরও কী কী করতে পারে, সে জন্যে তাদের কোনো পরামর্শের প্রয়োজন হবে না নিশ্চয়ই; তবে তিন বছর সময়কালে জুভেন্টাস রোনালদোকে কিভাবে ব্যবহার করেছে, সেদিকে তাকিয়ে ইউনাইটেড কিছু আইডিয়া নিতেই পারে।

রোনালদোকে নিয়ে জুভেন্টাস কিভাবে লাভবান হয়েছিল, তা নিয়ে 'রোনালদো ইকোনমিকস' শিরোনামে রীতিমতো একটা গবেষণাপত্র লিখে ফেলেছিল ফুটবল বেঞ্চমার্ক বলে একটা প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা আন্দ্রেয়া সার্তোরি বলছেন, '(রোনালদোর মতো খেলোয়াড়ের) প্রভাবটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ, বিশেষত বিপণন ও স্টেডিয়াম রাজস্বের ক্ষেত্রে। বাণিজ্যিক আয়ের কথা যদি বলা হয় তো রোনালদো আসার আগের মৌসুমে (২০১৭-১৮) জুভেন্টাসের উপার্জন ছিল ১৪৩ মিলিয়ন ইউরো। আর ২০১৯-২০ মৌসুমে সেই সংখ্যাটাই বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৫ মিলিয়ন ইউরোতে। জিপের সঙ্গে জার্সি স্পন্সরশিপ থেকে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ ১৭ মিলিয়ন ইউরো থেকে বেড়ে পৌঁছেছিল ৪৫ মিলিয়ন ইউরোতে। আর অ্যাডিডাসের সঙ্গে কিট স্পন্সরশিপের চুক্তি থেকে পাওয়া অর্থের পরিমাণ বেড়েছিল ২৮ মিলিয়ন।'ছবি: গেটি ইমেজেস

করোনা মহামারীর কারণে জুভেন্টাসের আয় বেশ খানিকটা কমেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে এরপরও পার্থক্যটা চোখে পড়ার মতোই, 'এই যে করোনা মহামারী চলছে, এর মধ্যেও জুভেন্টাসের জার্সি বিক্রি দ্বিগুণ বেড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে তাকালে রোনালদোর প্রভাবটা বোঝা যাবে আরও ভালোভাবে। রোনালদো আসার আগে জুভেন্টাসের অনুসারী সংখ্যা ছিল ৫০ মিলিয়নের সামান্য বেশি। কিন্তু এখন সংখ্যাটা দ্বিগুণেরও বেশি, ১১০ মিলিয়ন। এই সংখ্যাগুলোই প্রমাণ করে, রোনালদো বিপণন এবং দেখনদারির দিকটায় আন্তর্জাতিকভাবে কী পরিমাণ প্রভাব রাখতে পারেন।'

ইউনাইটেড অবশ্য জুভেন্টাসের মতো এত বড় লাফ দিতে পারবে বলে মনে হয় না। কারণ, জুভেন্টাসের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে থেকেই শুরু করছে তারা। তথ্য-উপাত্তে ভরসা রাখলে ইউনাইটেডকে আন্তর্জাতিক বিপণনের গুরুই বলতে হবে। এ বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রকাশিত ডেলোয়েট মানি রিপোর্টে যেমন দেখা যাচ্ছে, ২০১৯-২০ মৌসুমে ইউনাইটেডের রাজস্বের ৫৫ শতাংশই এসেছে বাণিজ্য খাত থেকে, সংখ্যার হিসাবে যা ২৮২ মিলিয়ন পাউন্ড। অঙ্কটা প্রিমিয়ার লিগের বাকি সব দলের চেয়ে বেশি তো বটেই; কেবল বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ এবং বায়ার্ন মিউনিখ ছাড়া আর সব দলই পড়ে গেছে তাদের নিচে। রোনালদোর সাহায্য নিয়েও জুভেন্টাস নেই ইউনাইটেডের ধারেকাছেও। ১৬২ মিলিয়ন পাউন্ড আয় করা টটেনহ্যাম হটস্পারের চেয়ে তারা এগিয়ে সামান্য ব্যবধানেই।

তবে রোনালদোর আগমনের পূর্বে এই ফারাকটা ছিল আরও বড়। সার্তোরি যেমন বলছেন, 'জুভেন্টাস যখন রোনালদোকে কিনল, তখন তাদের রাজস্বের পরিমাণ ৪০০ মিলিয়ন ইউরো। অঙ্কটা রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা কিংবা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের চেয়ে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন কম। বিশাল ব্যবধান।'

সার্তোরি জানাচ্ছেন, 'জুভেন্টাসের এই পিছিয়ে পড়ার কারণ ছিল বিপণন খাতে আয় কম হওয়া। রোনালদো আসাতে জুভেন্টাস আন্তর্জাতিক মহলে আবেদন বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিল, নতুন চুক্তি করতে পেরেছিল, ফলে বাণিজ্যিক খাত থেকে আয় বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছিল। আর সিরি 'আ'-ও তো বেশ কয়েক বছর ধরেই এমন একজন তারকার অভাব বোধ করছিল।'

সিরি 'আ' কিভাবে রোনালদো থেকে উপকৃত হয়েছে, তা গত এপ্রিলেই বুঝিয়েছিলেন জুভেন্টাসের প্রধান আগ্নেল্লি। বলেছিলেন, রোনালদো খেলতে গিয়েছে এমন ম্যাচগুলোতে টিকেট বিক্রি থেকে অতিরিক্ত চার মিলিয়ন ইউরো আয় করেছে অন্য ক্লাবগুলো। জুভেন্টাসের জন্য নির্ধারিত অ্যাওয়ে টিকিটের মূল্যও বাড়িয়ে দিয়েছিল ক্লাবগুলো।তবে ইউনাইটেড আর প্রিমিয়ার লিগের ক্ষেত্রে আয়টা এমন চকিতে বাড়বে না। প্রথমত, ব্র‍্যান্ডের বৈশ্বিক মূল্যের কারণে বিপণন খাত থেকে তাদের আয় আগে থেকেই বেশি ছিল। দ্বিতীয়ত, কোভিড-১৯ পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক চরিত্রই বদলে দিয়েছে।

একবিংশ শতাব্দীর গোড়ায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের তখনকার প্রধান নির্বাহী পিটার ক্যানইয়ন এবং মার্কেটিং ডিরেক্টর পিটার ড্র‍্যাপার বিশ্বব্যপী সমর্থক-গোষ্ঠী গড়ে তোলার যে ধারা শুরু করে দিয়েছিলেন, সেটা থামেনি এখনো। উডওয়ার্ডের সঙ্গে মিলে ইউনাইটেডের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিচার্ড আরনল্ড এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেই প্রকল্পই। এখন ইউনাইটেডের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী জুটি গড়েছে ২৪টা প্রতিষ্ঠান, এবং ইউনাইটেড ব্র‍্যান্ডের সঙ্গে নিজেদের নাম জড়াতে তাদের কারোরই খরচ সাত অঙ্কের নিচে নয়।

এই বছরের মার্চেই যেমন পাঁচ বছরের চুক্তিতে ক্লাবটির জার্সির মুখ্য স্পন্সর হয়েছে সফটওয়্যার কোম্পানি টিমভিউয়ার। এই সময়ে তাদের গুনতে হবে ৪৭ মিলিয়ন পাউন্ড। সঙ্গে জার্সি প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাস এনে দেবে আরও ৮০ মিলিয়ন পাউন্ড। যদিও গত গ্রীষ্মে প্রতিবেদন বেরিয়েছিল, সাম্প্রতিক সময়ে ইউনাইটেডের জার্সি বিক্রয়ের সংখ্যায় অসন্তোষ জানিয়েছে অ্যাডিডাস।

জার্সি বিক্রি যদি কমেও থাকে, সেই ধারায় নিশ্চিত করেই ছেদ পড়তে যাচ্ছে রোনালদোর প্রত্যাবর্তনে। তাঁর ব্যক্তিগত স্পন্সর যদিও নাইকি, কিন্তু রোনালদো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফিরে লাভ করে দিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাসেরই। কারণ, জার্সি বিক্রির বেশির ভাগ অর্থ জমা পড়ে ওই জার্সি প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠানের কোষাগারেই।

স্পোর্টস মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ এহসান শাহ বলছেন, 'কী মনে হয়, জার্সি বিক্রি থেকে ক্লাবগুলো কেমন আয় করে? সবচেয়ে ভাগ্যবান যারা, তারাও একটা জার্সি থেকে বিক্রিত মূল্যের ১০ শতাংশের বেশি পায় না। বাকিটা যায় অ্যাডিডাসের কাছে। তাহলে সবচেয়ে বড় দাও মারল কে? অ্যাডিডাসই তো খুব সম্ভবত!'

এহসান শাহ আরও জানান, সব জায়গাতেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের অংশীদারিত্ব আছে। বিপণনের দিকটায় তারা এরই মধ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আসার পরও এর চেয়ে আর কত বেশি তারা আয় করতে পারবে, প্রশ্ন তাই থেকেই যায়।

প্রশ্নের উত্তর‍টা পরের পর্বেই খোঁজা হোক।

রোনালদোকে পেয়ে ইউনাইটেডের অন্য লাভ-২

*'দ্য অ্যাথলেটিক' থেকে ভাষান্তর: রিজওয়ান রেহমান সাদিদ

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×