বেনিতেজ-মরিনহোর ভুল আর ফার্গুসন যেখানে অসাধারণ

দ্য অ্যাথলেটিক

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

বেনিতেজ-মরিনহোর ভুল আর ফার্গুসন যেখানে অসাধারণ

বেনিতেজ-কুইরোজ যেখানে ব্যর্থ, আনচেলোত্তি সেখানেই সফল। জোসে মরিনহোর অভিজ্ঞতা মিশ্র। আর অ্যালেক্স ফার্গুসনের সঙ্গে রোনালদোর সম্পর্ক তো ম্যানেজার-খেলোয়াড়ের সীমানা ছাড়িয়ে আরও বড় কিছু। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কাছ থেকে সেরাটা পেতে হলে ম্যানেজারকেও অনেক কিছু বুঝতে হয়। যে কাজটা কেউ পেরেছেন, কেউ পারেননি।

কার্লো আনচেলত্তি যখন প্রথমবার রিয়াল মাদ্রিদের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, পল ক্লেমেন্তে ছিলেন তাঁর সহকারী। আনচেলোত্তি কিভাবে রোনালদোর সেরাটা বের করে এনেছিলেন, তা তো প্রথম পর্বেই জেনেছেন। আইতর কারাঙ্কার অভিজ্ঞতাটা একটু ভিন্ন। জোসে মরিনহোর আমলে রিয়াল মাদ্রিদের সহকারী কোচ ছিলেন এই কোচ। তিনি বলছেন, 'ক্রিস্টিয়ানোর মতো ফুটবলাররা সব সময়ই ব্যতিক্রমী। কিন্তু জোসের কাছে দলই সবার ওপরে। ক্রিস্টিয়ানো সাধারণত গোলই করত; তবে অনেক সময়ই জোসে আর দলের মনে হতো, তাঁকে ডিফেন্ডিংও করতে হবে। আর রক্ষণে প্রথম ভূমিকাটা তো ক্রিস্টিয়ানোরই (ফরোয়ার্ড) হওয়ার কথা। এই ব্যাপারগুলো ওকে দেখিয়ে দেওয়ার দরকার পড়ত। মনে করিয়ে দিতে হতো , গোল করা ছাড়া ওকে এই ট্যাকটিক্যাল কাজগুলোও করতে হবে।'

কিন্তু তিনিই সেরা, এমন কিছুর নিশ্চয়তা কি রোনালদোরও দরকার পড়ত?

কারাঙ্কা বলছেন, অবশ্যই পড়ত। 'আমরা সবাই শুনতে চাই, আমরা যে যে-ই কাজটা করছি, সেখানে আমরাই সেরা। আর যখন আপনি আদতেই সেরা, তখন তো এটা আপনি আরও বেশি করে শুনতে চাইবেন। এটা অনুপ্রেরণা হিসেবেও কাজ করে। তাই, যখন ও (রোনালদো) এটা শুনতে পেত না, পরদিনই প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়ত যে, ও-ই সেরা। যেন অনুচ্চারিত প্রশ্ন করত, "তুমি কি দেখতে পাচ্ছ না, আমিই সেরা?"'রোনালদোর সঙ্গে জোসে মরিনহোর অভিজ্ঞতাটা ছিল মিশ্র। ছবি: গেটি ইমেজেস

একটা শিরোপা জয়ের জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা হচ্ছে, দলের সঠিক ভারসাম্য খুঁজে পাওয়া। ওই ভারসাম্যটা খুঁজে পেয়েছিলেন বলেই জোসে মরিনহো রিয়াল মাদ্রিদকে নিয়ে লা লিগা জিততে পেরেছিলেন, সেটাও পেপ গার্দিওলার ওই অনিন্দ্যসুন্দর বার্সেলোনাকে পেছনে ফেলে। বেশির ভাগ মানুষই মনে করেন, রোনালদোর সঙ্গে মরিনহোর সম্পর্ক কিছুটা তিক্ততার দিকেই ছিল। কথাটা হয়তো বেশির ভাগ সময়েই সত্যি, তবে দুজনের কিছু দারুণ মুহূর্তও কেটেছে।

রিয়ালে রোনালদোর ওই সময়টা সম্পর্কে কারাঙ্কা জানাছেন, 'ওর সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করাটা তো সম্মানের। আর ওকে কোচিং করানোও খুব সহজ। ওর চেয়ে পেশাদার কেউ, নিজেই নিজেকে শাণিত করার চেষ্টা করছে, নিখুঁত হওয়ার লক্ষ্য আছে, প্রতিদিনই উন্নতি করার ভাবনা আছে…এমন কাউকে আমি দেখিনি।'

তবে সময় যত গড়িয়েছে, মরিনহো বোধ হয় ভুলে গেছেন, তিনি একজন জটিল মনস্তত্ত্বের, একজন স্পর্শকাতর মানুষের সঙ্গে কাজ করছেন, আর সব কিছুর চাইতে ম্যানেজারের স্নেহের স্পর্শই যার সবচেয়ে বেশি দরকার। যে ছোঁয়া বেনিতেজ কখনো দিতে পারেননি। রিয়াল মাদ্রিদে তাঁর সময়টাও তাই মাস সাতেকের বেশি স্থায়ী হয়নি।

দায়িত্ব নেওয়ার পর বেনিতেজ প্রথম যে সংবাদ সম্মেলনটা করেছিলেন, সেখানেই এক স্প্যানিশ সাংবাদিক তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, রোনালদোকেই কি আপনি বিশ্বসেরা ফুটবলার মনে করেন? 'হ্যাঁ'-তেই যে প্রশ্নের খুব দারুণ উত্তর দেওয়া যায়, বেনিতেজ এক কাঠি এগিয়ে বলেছিলেন, 'হ্যাঁ, অন্যতম সেরা তো বটেই।' গণ্ডগোলের শুরু সেখান থেকেই। এর কিছুদিন পরই, ওয়েলসে উড়ে গিয়ে বেনিতেজ দেখা করে এসেছিলেন গ্যারেথ বেলের সঙ্গে। যেটা তিনি করেননি রোনালদোর ক্ষেত্রে, সম্পর্কটা তৈরি হওয়ার আগেই তাই ভেঙে যাওয়ার যোগাড়!

আপনি ভাবতেই পারেন, রোনালদোর অহমকে আরও প্রশ্রয় দেওয়ার কোনো কারণ বেনিতেজ দেখেননি। নাকি একে বাজে ম্যান-ম্যানেজমেন্টের আরেকটা উদাহরণ হিসেবেই দেখছেন? একগুঁয়ে হয়ে নিজের পদ্ধতিই আঁকড়ে ছিলেন বলে রোনালদোর সঙ্গে সম্পর্কটা সহজ করার কাজটা বেনিতেজ কখনোই করতে পারেননি। আর রোনালদোও রোনালদো হয়েই ছিলেন বলে ম্যানেজারকে সাহায্য করতে এগিয়ে যাননি তিনিও। আখেরে ক্ষতিটা হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদের।

বেনিতেজের সঙ্গে রোনালদোর কতটা দূরত্ব ছিল, সেটা বোঝাতে এল পাইস পত্রিকায় প্রকাশিত খবরটাও সম্ভবত প্রাসঙ্গিক হবে। বার্নাব্যুতে যে সাত মাস ছিলেন, তখনই কোনো এক ম্যাচের পর এক স্টাফকে দিয়ে রোনালদোর কাছে একটা ইউএসবি ড্রাইভে করে কিছু ক্লিপ পাঠিয়েছিলেন বেনিতেজ। ম্যাচে কিভাবে নিজের মার্কারকে ছিটকে ফেলতে হয়, সেটা বোঝাতেই আর কি।

ওই ইউএসবি ড্রাইভের ফাইলটা রোনালদো খুলে তো দেখেনইনি, উল্টো বলে পাঠিয়েছিলেন: 'বেনিতেজকে বলে দিও, আমিও একটা ইউএসবি ড্রাইভ পাঠাচ্ছি। আমার করা গোলগুলো থেকে যেন শিক্ষা-টিক্ষা নেয়।'

ফার্গুসনের সঙ্গে রোনালদোর সম্পর্কটা ম্যানেজার-খেলোয়াড় ছাড়িয়ে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আর মুগ্ধতায় রূপ নিয়েছিল। ছবি: গেটি ইমেজেসফার্গুসনের সামনে রোনালদোর নামটা একবার উচ্চারণ করে দেখুন, তাঁর চোখের তারায় স্পষ্ট একটা ঝিকিমিকি দেখতে পাবে। কিভাবে আর্সেনাল আর লিভারপুলের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে রোনালদোকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ভিড়িয়েছিলেন তিনি, সেটা নিয়ে কথা বলতেও তাঁর ভালোই লাগে। রোনালদোকে নিয়ে কথা বলতে ফার্গুসনের কখনোই কোনো ক্লান্তি নেই। রোনালদোর অর্জনের কিছুটা আলো তো তাঁর ওপরও পড়ে!

নিজের আত্মজীবনীতেই ফার্গুসন লিখেছেন, 'ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে কম গ্রেট ফুটবলারকে তো কোচিং করাইনি, তবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ছাড়িয়ে গেছে সবাইকেই। আমার ম্যানেজারিয়াল ক্যারিয়ারে ওর চেয়ে প্রতিভাবান খেলোয়াড় আর দেখিনি।'

মুগ্ধতাটা পারস্পরিক। একে অন্যের প্রতি তাদের শ্রদ্ধার জায়গাটায় ফিসফিসানির বিষবাষ্প ঢোকানোর তাই সুযোগই নেই কোনো। বাবার মৃত্যুর পর ফার্গুসন রোনালদোকে যেভাবে সমর্থন যুগিয়েছিলেন, রোনালদো তা ভোলেননি।

আর ওই ঘটনাটা তো আপনিও সম্ভবত ভোলেননি। ২০০৬ বিশ্বকাপে পর্তুগালের বিপক্ষে ম্যাচে লাল কার্ড দেখে বের হয়ে যাচ্ছেন ওয়েইন রুনি, আর রোনালদো বিদ্রুপাত্মক ভঙিতে চোখ টিপছেন পর্তুগালের বেঞ্চের দিকে তাকিয়ে। সেই লাল কার্ডে রোনালদোরও পরোক্ষ ভূমিকা ছিল বলে ইংলিশ মিডিয়া এমনভাবেই হামলে পড়েছিল যে, রোনালদো সিরিয়াসলিই প্রিমিয়ার লিগ আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছাড়ার চিন্তা করতে শুরু করেছিলেন। আর ফার্গুসন বরাবরের মতোই পাশে দাঁড়িয়েছিলেন রোনালদোর, পর্তুগালে উড়ে গিয়ে বলেছিলেন হৃদয় উৎসারিত ওই কথাটা, 'ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে পা রাখা গুটিকয়েক সাহসী ছেলের একজন তুমি; সেই তুমি যদি এভাবে চলে যাও, সেটা কিন্তু সাহসের প্রমাণ হবে না।'

যদি ভেবে থাকেন, রোনালদোর সব ভুলই ফার্গুসন এড়িয়ে যেতেন বলে সম্পর্কটা ভালো ছিল, তাহলেও ভুল করবেন। ফার্গুসনের 'হেয়ারড্রায়ার ট্রিটমেন্ট'-এর মধ্য দিয়ে রোনালদোকেও বেশ কয়েকবারই যেতে হয়েছে। একদম সবার সামনে রোনালদোকে বকা-ঝকা করার সাহসও তো ফার্গুসন দেখাতেন!

নিজের আত্মজীবনীতে রিও ফার্ডিনান্ডও যেমন এমন একটা ঘটনার কথা বলেছেন। বেনফিকাতে চ্যাম্পিয়নস লিগের একটা ম্যাচ খেলতে গিয়েছিল ইউনাইটেড। রোনালদোর শৈশবের ক্লাব স্পোর্টিং লিসবনের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বলে ওদের দেখিয়ে দেওয়ার নেশায়া টগবগ করে ফুটছিলেন রোনালদো। যে ভুলটা তাঁরও আগে অনেকেই করেছেন।হেয়ারড্রায়ার ট্রিটমেন্ট পেয়েছিলেন রোনালদোও। ছবি: গেটি ইমেজেস

ফার্ডিনান্ড বলছেন, 'ম্যাচটা হয়ে গিয়েছিল "ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো শো"। নিজের সমস্ত কাড়িকুড়ি দেখানোর চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল ও, কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। ম্যাচটা আমরা হেরে যাওয়াতে ম্যানেজার চরম কড়কানি দিয়েছিল ওকে, "মানে কী, শুধু  নিজের জন্যেই খেলবি? কী মনে হয়, বিরাট বড় হনু হয়ে গেছিস?"

'ফার্গুসনের এই সাহসটা ছিল। আর সবার মতো তিনিও জানতেন, রোনালদোই আমাদের যেকোনো জয়ের চাবিকাঠি। বেশির ভাগ ম্যানেজারই তাই ওকে শাসন করতে ভয় পেতেন। ইংল্যান্ডের কোনো ম্যানেজার ডেভিড বেকহাম, স্টিভেন জেরার্ড, ফ্র‍্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড বা ওয়েইন রুনিকে ওরকমভাবে বকা-ঝকা করেছে, এমনটা আমি কখনো দেখিনি। কিন্তু প্রয়োজন পড়লে ফার্গুসন সেটা করতেন। আপনাকে ছাড়া দল যতই অচল হয়ে যাক, তবুও।'

ইউনাইটেডের তখনকার ড্রেসিংরুমের কেউ কেউ অবশ্য মনে করতেন, রোনালদোকে বকে-টকে 'ঝিকে মেরে বউকে শেখানো' বাগধারার আদর্শ প্রয়োগ ঘটাতেন ফার্গুসন। ফার্ডিনান্ড তাই বলছেন, 'এটা আসলে পুরো দলের উদ্দেশেই বার্তা পাঠানোর একটা "ফার্গুসনীয় তরিকা" ছিল। তুমি যে-ই হও না কেন, ঠিকঠাকভাবে পারফর্ম করে যাওয়াটাই তোমার কাজ।'

তবে রোনালদো যে ফার্গুসনের এই কড়কানিগুলো হজম করে নিতেন, তার কারণও সম্ভবত ফার্গুসনই। এমনিতে রোনালদোকে শক্ত-পোক্ত করে গড়ে তোলার জন্য ইউনাইটেডের অনুশীলনে কেউ রোনালদোকে কড়া ট্যাকল করলে ফার্গুসন খুশিই হতেন। ফ্রি-কিক আদায় করতে রোনালদো মাঠের মধ্যে খুব সহজেই পড়ে যেতেন বলে এ নিয়েও অনেক কথা শুনিয়েছেন। তবে অনুশীলনের সময় তাঁকে পাস দেননি বলে  রুদ ফন নিস্টরলয় যখন রোনালদোকে ধাক্কা মেরে বসেন, তখন ফার্গুসন কিন্তু রোনালদোর পক্ষই নিয়েছিলেন। আনুগত্যের প্রতিদান যে একদিন পাওয়া যাবে, এই জ্ঞানটুকু বিশ্বের সবচেয়ে সফল ম্যানেজারও তো রাখেন!`কুইরোজকেই জিজ্ঞেস করুন` ছবি: গেটি ইমেজেস

রোনালদোকে রয় কিন স্বীকৃতি দিয়েছিলেন তাঁর  সবচেয়ে বুদ্ধিমান সতীর্থের। কারণটা বোঝা যায় বোলোনির ব্যাখ্যায়, 'ট্যাকটিক্যালি ও সব জানে।  মাঝেমধ্যে ও ড্রিবল করতে চেয়ে বল হারাত, তখন আমি কেবল ওর নামটা চিৎকার করে উঠতাম, "রোনালদো!" ব্যস! কোনো নির্দেশনা না, "পিছু হটো…. বাঁয়ে যাও…. ভেতরে ঢোকো"- জাতীয় কোনো কথা না। কিন্তু ও বুঝে যেত, পরের মুহূর্ত থেকে ওকে কী করতে হবে। ঠিক জায়গায় ও নিজেই নিজের পজিশন নিয়ে নিত, কিংবা বল জিতে নিত। ট্যাকটিক্যালি কোনো কিছুর ব্যাখ্যাই আমাকে দু'বার বলতে হয়নি।

বোলোনি যোগ করছেন, 'ও তো জাত স্ট্রাইকার। স্ট্রাইকাররা এমনিতেই ডিফেন্ড করতে পছন্দ করে না। তবে দলের প্রয়োজনে রোনালদো ডিফেন্ডিংও করত। এখনো কর্নারগুলোতে ওকে ডিফেন্সকে সাহায্য করতে দেখা যায়। ম্যানেজারের ঘুম হারাম করার মতো কোনো ফুটবলার নয় ও।'

কার্লোস কুইরোজ অবশ্য শেষের লাইনটা পড়ে প্রবল আপত্তিই জানাবেন। ২০১০ বিশ্বকাপে পর্তুগালের ম্যানেজার ছিলেন কুইরোজ। ২০১৫ সালে গিলেম বালাগের লেখা 'রোনালদো' জীবনীটা পড়ে জানা যাচ্ছ, ওই বিশ্বকাপের পর দুজন আর কথা বলেননি একটিবারের জন্যেও। রোনালদো কুইরোজের ব্যাপারে কেমন ধারণা পোষণ করেন, সেটা অবশ্য বোঝা গিয়েছিল বিশ্বকাপের পরই। ২০১০ বিশ্বকাপে তাঁর ব্যর্থতার কারণ জিজ্ঞাসা করলে রোনালদো উত্তর দিয়েছিলেন এক বাক্যেই,' কুইরোজকে জিজ্ঞাসা করুন না!'

*'দ্য অ্যাথলেটিক' থেকে অনুবাদ: রিজওয়ান রেহমান সাদিদ

চলবে...

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×