শুরুর আগেই যে রেকর্ড

লন্ডন অলিম্পিক

উৎপল শুভ্র

২১ জুলাই ২০২১

শুরুর আগেই যে রেকর্ড

ছবি: গেটি ইমেজেস

২০১২ অলিম্পিক শুরুর আগে থেকেই আঁকিবুঁকি শুরু হয়ে গিয়েছিল রেকর্ডের খাতায়। ১৯০৮ সালে প্রথম, ১৯৪৮-এ দ্বিতীয়, ২০১২-তে তৃতীয়। একই শহরে তিন-তিনটি অলিম্পিক আয়োজনের কৃতিত্ব তো লন্ডনই দেখিয়েছিল প্রথম।

প্রথম প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০১২। প্রথম আলো

বোল্ট-ফেলপস যা-ই করুন না কেন, এই অলিম্পিকের আসল রেকর্ডটা তাঁদের কেউ করতে পারছেন না। রেকর্ড গড়তে বোল্টকে ট্র্যাকে নামতে হবে, ফেলপস পুলে। তবে যে রেকর্ডের কথা বলা হচ্ছে, সেটি হয়ে যাচ্ছে খেলা-টেলা শুরুর আগেই। শুধু অলিম্পিকের আয়োজক হয়েই রেকর্ড বইয়ে উঠে যাচ্ছে লন্ডনের নাম।

অলিম্পিক বলতে আমরা একটা আয়োজনই বুঝি। কিন্তু অলিম্পিক তো আসলে দুটি—সামার ও উইন্টার। শীতকালীন অলিম্পিকে যেসব খেলা হয়, আমাদের দেশে সেসবের প্রচলন নেই বলে আমরা সেটির খোঁজখবরও রাখি না। তবে আয়োজক-টায়োজক জাতীয় রেকর্ডে দুটি অলিম্পিকই বিবেচিত হয়। তো সামার ও উইন্টার দুই অলিম্পিক মিলিয়েই লন্ডন গড়ে ফেলছে অনন্য এক কীর্তি। তৃতীয়বারের মতো অলিম্পিকের আয়োজক হতে পারেনি আর কোনো শহর।

১৯০৮ সালে প্রথম হয়েছিল, ১৯৪৮ সালে দ্বিতীয়, এরপর এই ২০১২। রেকর্ডের ব্যাপারটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল সাত বছর আগেই। ২০০৫ সালের জুলাইয়ে সিঙ্গাপুরে আইওসির সভায় প্যারিসকে ৫৪-৫০ ভোটে হারিয়ে ২০১২ অলিম্পিকের আয়োজক হিসেবে চূড়ান্ত হয় লন্ডনের নাম। প্রার্থী ছিল আরও তিনটি শহর। তবে মস্কো, নিউইয়র্ক ও মাদ্রিদ বাদ পড়ে যায় আগেই।

২০১২ অলিম্পিকের আয়োজন দেখতে দেখতে কল্পচোখে লন্ডনে আগের দুটি অলিম্পিক দেখার চেষ্টা করছিলাম। প্রথমটি ১০৪ বছর আগে। দ্বিতীয়টিরও ৬৪ বছর হয়ে গেল। এর মধ্যে কত কী হয়ে গেছে! অলিম্পিকও ক্রমেই বৃহত্তর হয়েছে আকারে-প্রভাবে। লন্ডনে তিনটি আয়োজন নিয়ে একটা কিছু বানালে সেটি অলিম্পিক গেমসের ক্রমবিবর্তনের একটা প্রামাণ্যচিত্রও হয়ে যায়। 

২০১২ অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছে ২০৪টি দেশ। অ্যাথলেটের সংখ্যা ১০ সহস্রাধিক। ১৯০৮ সালে সংখ্যা দুটি কত ছিল, জানেন? দেশের সংখ্যা ২২, অ্যাথলেট ২০০৮। সেই অলিম্পিকটি অবশ্য হওয়ার কথা ছিল রোমে। ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে নেপলস শহর প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় ইতালির আর অলিম্পিক আয়োজনের মতো অবস্থা ছিল না। দায়িত্বটা পড়ে লন্ডনের ওপর। সেই অলিম্পিকে অনেক কিছুই হয়েছে, তবে সেটি স্থায়ী চিহ্ন রেখে গেছে ম্যারাথনে। এর আগ পর্যন্ত ম্যারাথন ছিল ২৫ মাইলের দৌড়। কখনো কখনো তা সাড়ে ২৪ মাইলও হয়েছে। ১৯০৮ লন্ডন অলিম্পিকে প্রথমে সেটিকে ২৬ মাইল করা হলো যাতে তা উইন্ডসর ক্যাসল থেকে শুরু হতে পারে। শেষ পর্যন্ত আরও ৩৮৫ গজ কীভাবে যোগ হয়ে গেল, তা নিয়ে নানা রকম ভাষ্য আছে। তবে একটা ব্যাপারে সবাই একমত, শুরু ও শেষটা যেন রাজপরিবারের সদস্যরা ভালোভাবে দেখতে পান এটি নিশ্চিত করতেই এই পরিবর্তন। ১৯২১ সাল থেকে এটাই ম্যারাথনের দৈর্ঘ্য হিসেবে সর্বজনগৃহীত হয়ে যায়। ম্যারাথন একটা জায়গায় অলিম্পিকে একমেবাদ্বিতীয়ম। আর সব দৌড়-হাঁটা সব মেট্রিক পদ্ধতিতে হলেও শুধু ম্যারাথনের দৈর্ঘ্যটাই মাপা হয় স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতিতে। বাকি সময় কিলোমিটার আর মিটারের মধ্যে শুধু এই এটাই মাইল আর গজ।

১৯০৮ অলিম্পিকের সেই ম্যারাথন নিয়ে একটি ইলাস্ট্রেশন। ছবি: গেটি ইমেজেস

লন্ডনে দ্বিতীয় অলিম্পিকটির গায়ে শুরুর আগেই যোগ হয়ে যায় বিশেষ তাৎপর্য। সেটি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর প্রথম অলিম্পিক। অলিম্পিকের জনক পিয়েরে দ্য কুবার্তিনের মৃত্যুর পরও প্রথম (কুবার্তিন মারা যান ১৯৩৭ সালে)। বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১২ বছরের বিরতি। বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগে ঠিক হয়ে ছিল, ১৯৪০ সালের অলিম্পিক হবে টোকিওতে, ১৯৪৪ সালেরটা লন্ডনে। সেই হিসাবে বিশ্বযুদ্ধ শেষে প্রথম অলিম্পিক আয়োজনের দাবিটা টোকিওরই ছিল। কিন্তু যুদ্ধে ওই কলঙ্কিত ভূমিকার কারণে জার্মানির সঙ্গে জাপানও তখন অলিম্পিকে নিষিদ্ধ।

বিশ্বযুদ্ধে ধ্বংসযজ্ঞে ইংল্যান্ডের অর্থনীতি তখন বিপর্যস্ত। ১৯৪৮ অলিম্পিকে তাই নতুন কোনো ভেন্যু নির্মিত হয়নি। অ্যাথলেটদের কোনো অলিম্পিক ভিলেজও না। ৫৯টি দেশের ৪১০৪ জন অ্যাথলেট অংশ নিয়েছিল সেই গেমসে। যেটি স্মরণীয় হয়ে আছে ‘দ্য ফ্লাইং হাউজওয়াইফ’-এর কারণে। ৩০ বছর বয়সী দুই সন্তানের জননী ডাচ স্প্রিন্টার ফ্যানি ব্ল্যাকার্স-কোয়েনকে ডাকা হতো এই নামেই। চারটি সোনা জিতেছিলেন কোয়েন।

অলিম্পিক উপলক্ষে কত আয়োজনই তো হচ্ছে। লন্ডন ২০১২ আয়োজকেরা ১৯০৮ ও ১৯৪৮ অলিম্পিকের স্মৃতিচিহ্নগুলো ঘুরিয়ে দেখানোর একটা উদ্যোগ নিলে খারাপ হতো না! 

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×