‘ব্রিটিশ শো’ দিয়ে আজ অলিম্পিকের আবাহন

২০১২ লন্ডন অলিম্পিক

উৎপল শুভ্র

২১ জুলাই ২০২১

‘ব্রিটিশ শো’ দিয়ে আজ অলিম্পিকের আবাহন

অলিম্পিকের খেলাগুলোর মতো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও বড় এক আকর্ষণ। কী আয়োজন থাকবে, কারা পারফর্ম করবেন-- অলিম্পিক শুরুর আগে থেকেই চতুর্দিক মুখরিত থাকে এসব জিজ্ঞাসায়। ড্যানি বয়েলের পরিচালনায় সাজানো হয়েছিল লন্ডন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের আগে সব প্রশ্নে তিনি দিচ্ছিলেন একটা উত্তরই, 'শতভাগ ব্রিটিশ শো'।

প্রথম প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০১২। প্রথম আলো

এই মুহূর্তে বিশ্বে সবচেয়ে উদ্বেগাকুল লোকটির নাম কি ড্যানি বয়েল? স্লামডগ মিলিয়নিয়ার মুক্তি পাওয়ার দিনও হয়তো নার্ভাস ছিলেন। তবে দুটির মধ্যে কি আর তুলনা চলে! সিনেমা মুক্তি পাওয়ার দিন চিত্রপরিচালকের টেনশন হয়ই, তবে সেটি তো আর লন্ডন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মতো এমন বৈশ্বিক উপলক্ষ ছিল না। অলিম্পিক স্টেডিয়ামে সশরীরে উপস্থিত থাকবেন ৮০ হাজার দর্শক। কিন্তু আজকের রাতের ওই মহাযজ্ঞের দিকে তাকিয়ে থাকবে আরও কোটি কোটি চোখ। বলতে গেলে পুরো বিশ্বই।

মহাযজ্ঞই তো! খেলাটাই আসল, কিন্তু অলিম্পিকে খেলার চেয়ে উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠান ঘিরেও আগ্রহ কম থাকে না। আয়োজকদের শ্রম-মেধার বড় একটা অংশ ব্যয় এতে। ‘ব্যয়’ শব্দটা আক্ষরিক অর্থে নিলেও এই মহাযজ্ঞের ব্যাপ্তি সম্পর্কে একটা ধারণা মিলবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্যয় হচ্ছে ২৭ মিলিয়ন পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৩৭২ কোটি টাকা। যা অলিম্পিক ও প্যারা-অলিম্পিক মিলিয়ে মোট ব্যয়ের এক-তৃতীয়াংশ। প্রথা অনুযায়ী আয়োজক দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে পুরো বিশ্বকে এই ক্রীড়া-উৎসবে আমন্ত্রণ জানানোর দায়িত্বটা বর্তেছে ড্যানি বয়েলের ওপর।

ক্ষণগণনা শুরু হয়ে গেছে অনেক দিন আগেই। আজ সকাল আটটা ১২ মিনিটে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক ১২ ঘণ্টা আগে সেটি আরও আনুষ্ঠানিক রূপ পাবে। ঘণ্টা বেজে উঠবে লন্ডনের বিগ বেনে। তিন মিনিটে ৪০ বার ঢং ঢং আওয়াজ তুলে সেটি ঘোষণা করবে অলিম্পিকের আগমনী বার্তা। বিগ বেনের প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টা বাজানোর ব্যতিক্রম হবে প্রায় ৬০ বছর পর। সর্বশেষ বিগ বেন নির্ধারিত সময়ের বাইরে বেজেছিল ১৯৫২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। রাজা ষষ্ঠ জর্জের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের সময়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগেই লন্ডনে শুরু হয়ে গিয়েছিল উৎসব। ছবি: গেটি ইমেজেস

শুধু বিগ বেনের ঘণ্টাই নয়, ব্রিটেনে যেখানে যত ঘণ্টা আছে, সবই বাজবে আজ একই সময়ে। একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি ঘণ্টা বাজার বিশ্বরেকর্ডও নাকি হয়ে যাবে এতে। রাত আটটা ১২ মিনিটে যেটি শুরু হবে, তা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রি-শো। মূল অনুষ্ঠান শুরু রাত নয়টায় (বাংলাদেশ সময় রাত দুইটা)। তিন ঘণ্টা, বড়জোর সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে তা শেষ করে ফেলার পরিকল্পনা বয়েলের। আধঘণ্টার ওই ফাঁকটা রাখা হয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অপরিহার্য অনুষঙ্গ মার্চপাস্টের জন্য কতটা সময় লাগবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন বলে। স্মার্টফোনের এই যুগে মার্চপাস্ট করতে করতেই অ্যাথলেটরা নিশ্চিত টুইট করবেন, ছবি পোস্ট করবেন। এসব করতে গিয়ে মার্চপাস্ট যেন বেশি ধীর হয়ে না পড়ে, সেটি নিশ্চিত করতে তাড়াতাড়ি হাঁটতেও বলে দেওয়া হয়েছে সবাইকে।

মার্চপাস্টের ব্যাপারটাই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে। এর বাইরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আর কী কী থাকবে, তা নিয়ে যথারীতি ‘ঢাকঢাক-গুড়গুড়’ চলছে। গত সোম ও বুধবার প্রায় ৬০ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে দুটি টেকনিক্যাল রিহার্সাল হয়েছে। বড় পর্দায় টুইটারের স্টাইলে ভেসে উঠেছে ড্যানি বয়েলের বার্তা—সেভ দ্য সারপ্রাইজ, আপনারাই বিশ্বে প্রথম এটি দেখছেন, দয়া করে কোনো ছবি টুইট করবেন না। দর্শকেরা সেই অনুরোধ রেখেছেন বলেই মনে হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্পর্কে ‘দুর্দান্ত’, ‘অসাধারণ’, ‘পরাবাস্তব’ এমন সব বিশেষণ ব্যবহৃত হলেও কি দেখেছেন, সে ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চুপই আছেন সবাই।

তার পরও নানা সূত্রে টুকটাক কিছু যে একদমই প্রকাশিত হয়নি, তা নয়। শোনা যাচ্ছে অনেক কিছুই। অলিম্পিক স্টেডিয়াম বিশাল এক মাঠ হয়ে যাবে, যাতে চড়ে বেড়াবে জ্যান্ত ৭০টি ভেড়া; নকল বৃষ্টি নামবে, উড়ে আসবে হেলিকপ্টার, শেক্সপিয়ার থাকবেন, থাকবে শিল্পবিপ্লবের প্রতীকী ইতিহাস—আসলে এর কতটা সত্যি, সেটি আগে থেকে বলার উপায় নেই। বয়েল শুধু এটুকুই বলেছেন, এটা হবে ‘ব্রিটিশ শো’।

সেই ‘ব্রিটিশ শো’ চার বছর আগের ‘চায়নিজ শো’কে ছাড়িয়ে যেতে পারবে তো?

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×