তবে তো ব্রাজিলের ছয়ে ছয়!

উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

ইমতিয়াজ চৌধুরী

২৮ জুন ২০২১

তবে তো ব্রাজিলের ছয়ে ছয়!

আরও একবার হলুদ-উৎসব? ইতিহাস তো তা-ই বলছে! ছবি: এএফপি

লাতিন অঞ্চলের ফুটবলের কথা মাথায় আনলে সর্বপ্রথম ব্রাজিল নামটিই স্মরণ করাবে আপনার মস্তিষ্ক। ফুটবলে যে শৈল্পিকতার ছোঁয়া যুগে যুগে ব্রাজিল দেখিয়েছে, তা তো বিশ্ব ফুটবলকেই রাঙিয়ে দিয়েছে বারবার। এবার সেই ব্রাজিলেই বসেছে কোপা আমেরিকার আসর। এক পাঠক পরিসংখ্যান আর ইতিহাস ঘাঁটাঘাঁটি করে জানালেন, স্বাগতিক হয়েই কোপা আমেরিকা জয় নিশ্চিত করে ফেলেছে সেলেসাওরা। কীভাবে? নিজেই পড়ে দেখুন না!

চলছে কোপা আমেরিকা। শুরু হয়েছে দলগুলোর শক্তিসামর্থ্য নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ, তথ্যমূলক হিসাব-নিকাশ। তো পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, ব্রাজিলের ঘরেই উঠতে যাচ্ছে এবারের দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। আপনি অবাক হচ্ছেন? না, অবাক হওয়ার কিছু নেই। চলুন না দেখে নেওয়া যাক, কীভাবে কোপা শিরোপা ঘরে তুলতে যাচ্ছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

গল্পের শুরু সেই ১৯১৯ সালে। চার দল নিয়ে শুরু হলো লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের শ্রেষ্ঠত্বের মহারণের তৃতীয় আসর! শুনতে অবিশ্বাস্য শোনাচ্ছে কি? হ্যাঁ, আর্জেন্টিনা, চিলি, উরুগুয়ে এবং ব্রাজিল--এই চার দল নিয়েই হয়েছিল গ্রুপ পর্বের খেলা। সেখান থেকে প্লে-অফে উঠেছিল ব্রাজিল এবং উরুগুয়ে। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটাই কি দারুণভাবেই না জমে গেল! পাক্কা দেড় শ মিনিটের খেলা শেষে শ্বাসরুদ্ধকর জয় পেল ব্রাজিল।

২৯ মে, ১৯১৯। ঐতিহাসিক রিও ডি জেনিরোতে সেদিন ব্রাজিলের প্রথম কোপা শিরোপা জয়ের নায়ক আর্থুর ফ্রাইডেনরিচ। ম্যাচের নির্ধারিত সময় গোলশূন্য শেষ হলে, দুই অধিনায়কের সম্মতিতে রেফারি সিদ্ধান্ত জানান, খেলা হবে আরও ৬০ মিনিট। সব মিলিয়ে ১৫০ মিনিটে গড়ানো ম্যাচের ১২২-তম মিনিটে ব্রাজিলিয়ানদের মুখে এক ঝলক হাসি এনে দেন ফ্রাইডেনরিচ। তার একমাত্র গোলেই কোপা পথচলায় প্রথম শিরোপাজয়ের গল্প লেখে ব্রাজিল।

এই মাঠে খেলেই এসেছিল ব্রাজিলের প্রথম কোপা শিরোপা। ছবি: উইকিপিডিয়া

সবে তো শুরু। কাকতালীয় যে ব্যাপারটি এবারও ব্রাজিলকে শিরোপা জিতিয়ে দিচ্ছে তা তো বলা হলো না। আপনাকে নিয়ে সেই ১৯১৯ সালের ফাইনালে ঘুরতে ঘুরতেই আসল কথায় আসতে কালক্ষেপণ। যা হোক, লাতিন অঞ্চলের জমজমাট এই টুর্নামেন্টের মোট ৪৬টি আসরের মধ্যে ব্রাজিল স্বাগতিক হয়েছে পাঁচবার, যেখানে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছে তারা। ভালো খেলেছে, গোল করেছে, সব কয়টা শিরোপাও নিজেদের করেছে।

ঘরের মাঠে সুখকর এই পথচলায় পাঁচটি ফাইনাল জয়ে দুবার করে অশ্রু ঝরিয়েছে উরুগুয়ে এবং প্যারাগুয়ের খেলোয়াড়দের। সবশেষ ২০১৯ সালে পেরুর শিরোপা আকাঙ্ক্ষা গুড়িয়ে দেয় স্বাগতিকরা। আর তাতেই পাঁচে পাঁচ ব্রাজিলের। একটা রেওয়াজ তো হয়েছেই, ঘরের মাঠে কোপা মানেই শিরোপা হলুদে পাখিদের। সেই রেওয়াজ কি ধরে রাখতে পারবে এবার?

পরিসংখ্যানের মারপ্যাঁচে এবার আরেকটু নিশ্চিত হওয়া যাক না। ঘরের মাঠে যে কয়টা কোপা আয়োজন করেছে, সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ব্রাজিল ম্যাচ খেলেছে ৩৪টি। যেখানে একটি মাত্র ম্যাচে হারের স্বাদ পাওয়ার বিপরীতে নয়টি ড্র। বাকি ২৪ ম্যাচ জিতে নিয়েছে ব্রাজিল। গোলের হিসাবটা তো ব্রাজিল সমর্থকদের মনে একরাশ স্বস্তিই দেবে। ৩৪ ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে ৯৯বার বল জড়িয়েছে ব্রাজিল।

এবারের আসরে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরের সঙ্গে ড্র করলেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে ব্রাজিল। ছবি: এএফপি

তবে নিজেরা কত গোল হজম করেছে, তা-ও তো উল্লেখ করা চাই। হ্যাঁ, বলছি, মাত্র ১৫টি গোল হজম করেছে। ২০ ম্যাচেই ক্লিন শিট! অন্যদিকে প্রতি ম্যাচে গড়ে প্রায় তিন গোল করে যাওয়া ব্রাজিল দল এবারও সেরা ছন্দে। কোপা আমেরিকা ২০২১ আয়োজন করছে তারা, গ্রুপ পর্বের চার ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে দশ গোল দেওয়ার বিপরীতে হজম করেছে মাত্র দুই গোল।

শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরের সাথে ১-১ গোলে ড্র করার আগেই কলম্বিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে 'বি' গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছে সেলেসাওরা। বলতেই হবে রীতিমতো উড়ছে ব্রাজিল। তবে এখানেই শেষ নয়। শেষ পর্যন্ত ডানা মেলে উড়তে পারলেই তো হয়, হলুদে পাখিদের ছয়ে ছয়!

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×