মেসির পূর্ণতা নাকি নেইমারের সফলতা?

উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

ইমতিয়াজ চৌধুরী

১১ জুলাই ২০২১

মেসির পূর্ণতা নাকি নেইমারের সফলতা?

ছবি: ফুট দ্য বল

আমরা দেখিই তো সূর্যের দুটি রূপ, আমরা জানিই তো আলো-আঁধারের কল্যাণে কী নিদারুণ বিভক্তি। যেখানে আবহমান নদীর মতো বয়ে চলে দিন আর রাত। আঁধার-আলো-আঁধার, ঠিক যেমন একটি সাফল্য-ব্যর্থতার সমীকরণের আয়নাও তো বটে। যে আয়নার সামনে প্রায়শই দাঁড়িয়ে থাকেন ক্রীড়াবিদ, ফুটবলাররা। লিওনেল মেসির সমীকরণটাও কি তাই? চলুন না এক পলক ঘুরে আসা যাক।

লিওনেল আন্দ্রেস মেসি! একটি নাম, একটি মহাকাব্য। ফুটবল কালিতে লেখা যে মহাকাব্যের একেকটি পাতায় মিশে আছে অর্জন, আশা, হতাশা। ফুটবল আকাশের ঝলমলে সূর্যটার নাম যদি হয় মেসি, তবে ওপরের সমীকরণটার সাথে তো মিলেই যাচ্ছে ঢের! তবে ঘুরেফিরে মহাকাব্যের শেষ অংশটাই আলোচনার বিষয় হয়েছে গোধূলিলগ্নে। একটি শিরোপা যে চায়, আলোচনাটাও তাই।

এবার সেই চাওয়ার তীব্রতার উপলক্ষ হয়েছে মারাকানার ফাইনাল। শিরোপার লড়াইয়ে সবুজ গালিচায় হলুদ জার্সিধারী স্বাগতিক ব্রাজিলের মোকাবেলা করবে আর্জেন্টিনা। এক তো মেসির সম্ভাব্য শেষ কোপা, আবার অধিনায়কের কাঁধে আছে দলের দীর্ঘদিনের শিরোপা খরা দূর করার গুরুদায়িত্ব। সবকিছু ছাপিয়ে মেসি মারাকানার নায়ক হতে পারবেন কি না, তা জানতে তো ম্যাচের শেষ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।

তবে বিশ্বজুড়ে যে ফুটবল-জ্বর, তা মাপার মতো থার্মোমিটার পাওয়া না গেলেও দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর সামর্থ্য-সম্ভাবনা মাপার যন্ত্র ঠিকই বের করে ফেলা যায়। পরিসংখ্যান তো একটা সংখ্যা মাত্র, সে অনেক কিছুই বলে। সেসবে তোয়াক্কা নেই কারোরই। নতুন ভোর মানেই তো নতুন সূর্য। একটি নতুন দিনের গল্প লেখার যে স্বপ্ন, বারবার আহত হওয়া সেই স্বপ্ন জোড়া লাগাতে আবারও উঠে দাঁড়ানো মেসি কি পারবেন অপরাজিত ব্রাজিলকে পরাস্ত করতে?

অপরাজিত মানে? আরে মশাই, বলছি। কোপা আমেরিকা ২০২১-এর ফাইনালের যে মঞ্চ, সেই মারাকানা স্টেডিয়ামের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ব্রাজিল অপরাজিত। ১৯৫০ থেকে ২০২১, সময়টা আপনিই হিসাব করুন না। পাক্কা ৭১ বছরে কোনো ম্যাচ হারেনি ব্রাজিল। এমন দলের বিপক্ষে মেসির স্বপ্নপূরণ যে মোটেই চাট্টিখানি ব্যাপার নয়, তা আমার-আপনার অজানাও নয়। তা-ও যে ওই 'মানুষ আশায় বাঁচে' কথাতেই ভরসা। আর জাদুকরের বাঁ পা তো আছেই।

সূর্যগ্রহণের কথা নিশ্চয়ই শুনেছেন, তাই না! এমনও হয়, ঠাসা রোদের ভরদুপুরটা মুহূর্তেই আঁধারে ছেয়ে গেছে। বন্ধু নেইমারের ঝলকে আঁধারেই হারিয়ে যাবে না তো মেসির জাদুর কাঠি? যদি এমন হয়, তবে কেমন হয়! বন্ধুত্বের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে চরম শত্রুতায় রূপ নিয়েছে দু'দলের মহাতারকার লড়াই। ম্যাচের আগে নেইমার-মেসিরা কিন্তু সেই বার্তাই দিয়ে রাখছেন দর্শক মহলে। ওরাও শুনতে পান, লাখো কোটি সমর্থকের আকুতি। কানে বাজে যেন, 'মেসি তুমি জেতো, নেইমার তুমি জেতো।' তাই তো এই প্রাণপণ লড়াই।

মেসি না নেইমার? ছবি: ফক্স সকার

মুখোমুখি লড়াইয়ে কিন্তু ব্রাজিলই এগিয়ে। ১১১ ম্যাচের ৪৬টিই জিতেছে ব্রাজিল, বিপরীতে আর্জেন্টিনার জয়োল্লাস ৪০ বার। ২৫ ম্যাচ অমিমাংসিত থেকেছে। সবশেষ দেখা ২০১৯ কোপা আমেরিকা আসরের নকআউটে, যেখানে ২-০ গোলে হেরেছে আলবিসেলেস্তেরা। তবে ফাইনাল তো ফাইনালই। গোলের খেলায় যারাই এগিয়ে থাকবেন, দিনশেষে হাসিটাও তাদের ঠোটে। যে হাসি-কান্নার জল সুদূর আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে এসে আছড়ে পড়বে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে।

বলছিলাম 'কোপা ফাইনাল-দ্য বিগেস্ট ক্ল্যাশ' নিয়ে বাংলাদেশি সমর্থকদের উন্মাদনার কথা। নানান হিসাব-নিকাশের মাপকাঠিতে ভরসা রাখছেন নিজ দলে। কেউ তো চান, জয়-পরাজয় ছাপিয়ে স্রেফ মেসি-নেইমারের যুদ্ধটাই উপভোগ্য হয়ে যাক। হবেও তাই, নেইমারের কথাতেই বোঝা যায়। ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার কি বলেছেন দেখুন না, 'আমি দেশের জন্যই এই শিরোপা জিততে চাই।' অপরদিকে মেসির বুলিও অভিন্ন। একদম সমানে সমান।

চাওয়া একটাই। শিরোপা যারই হোক, ফুটবলের সৌন্দর্য থাকুক পুরোদমে।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×