উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

৩৩৫ দিনের, নাকি শিরোপার অপেক্ষা নিশামের?

ইফতেখার নিলয়

১৬ নভেম্বর ২০২১

৩৩৫ দিনের, নাকি শিরোপার অপেক্ষা নিশামের?

এই ছবিটাই জিমি নিশাম। ছবি: গেটি ইমেজেস

শেষমেশ আর উদযাপন করা হয়নি নিশামের। আরেকটি ফাইনাল হারের পর বরং নতুন করে জোরালো হয়েছে ‘নিশামের উদযাপন যে আরও কতদিন লুকিয়ে রাখতে হবে’ সেই প্রশ্ন। যে প্রশ্নেরও এক আশাবাদী জবাব আগেভাগেই দিয়ে রেখেছেন টুইটারে। জানিয়েছেন, আপাতত অপেক্ষা ৩৩৫ দিনের। 

ফাইনাল নিশ্চিতের ম্যাচে ডাগআউটে বসে থাকা নিউজিল্যান্ড দলের সদস্যদের উদযাপনের মধ্যে নিশামের নীরবতায় বোঝার উপায় ছিল না, কঠিন হয়ে যাওয়া ম্যাচের সমীকরণ সহজ করেই কিছুক্ষণ আগে ডাগআউটে ফিরেছেন তিনি। 

সবার উদযাপনের মাঝেও নীরব ছিলেন নিশাম। ছবি : টুইটারনিউজিল্যান্ডের বাকি সব ক্রিকেটার আনন্দে ফেটে পড়েছেন। আবেগ প্রকাশে মিতব্যয়ী অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনও একটু হলেও হেসেছিলেন। কিন্তু ১১ বলে ২৭ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলা নিশাম কেন নীরব ছিলেন?  

কারণ জানতে অপেক্ষা করতে হয়েছে নিশামের টুইটের। যেখানে ইএসপিএন ক্রিকইনফোর ছবি রিটুইট করে লিখেছিলেন, ‘কাজ কি শেষ? আমি তো মনে করি না।‘ শিরোপাই মোক্ষধাম, তাই উদযাপনটা জমিয়ে রেখেছিলেন বোধ হয়। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালের নিষ্ঠুরতম পরাজয়ের পর থেকেই হয়তো এমন বাস্তববাদী বনে গেছেন নিশাম।

শেষমেশ আর উদযাপন করা হয়নি নিশামের। আরেকটি ফাইনাল হারের পর বরং নতুন করে জোরালো হয়েছে ‘নিশামের উদযাপন যে আরও কতদিন লুকিয়ে রাখতে হবে’ সেই প্রশ্ন। যে প্রশ্নেরও এক আশাবাদী জবাব আগেভাগেই দিয়ে রেখেছেন টুইটারে। জানিয়েছেন, আপাতত অপেক্ষা ৩৩৫ দিনের। 

টুইটের প্রায় একদিন পেরিয়ে যাওয়ায় এখন হিসাবে আনতে হবে ৩৩৪ দিন। দিনগুলো পার হলে অস্ট্রেলিয়ায় বসবে পরবর্তী আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসর। তীর্থের কাকের মতোই সেই আসরের জন্য অপেক্ষা তাই নিশামের। শিরোপার পথটা অনেক দীর্ঘ ও বন্ধুর, তাই প্রথমে বিশ্বকাপের অপেক্ষাকেই বেশি প্রাধান্য দিতে হচ্ছে হয়তো।

টুইটারে সব সময়ই সরব নিশাম। নিয়মের মারপ্যাঁচে ২০১৯ বিশ্বকাপ হারার পর মজার ছলে টুইটারে সে বিশ্বকাপে আইসিসির বানানো আইনের নানাবিধ সমালোচনা করেছিলেন তিনি। বিশেষ করে ইউরো ফুটবলে ২০২০ ফাইনালের পর লিখেছিলেন, ‘পেনাল্টি শুট আউটে কেন? যারা বেশি ত্রুটিমুক্ত বল পাস করেছে, তারা কেন জয়ী নয়? এরপর হ্যাশট্যাগ দিয়ে ‘জোকিং’ উল্লেখ করে দিয়েছিলেন। 

কিউইরা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের প্রথম আসরের শিরোপা ঘরে তুললেও সেখানে ছিলেন না নিশাম। সে বিবেচনায় নিউজিল্যান্ডের তুলনায় নিশামের অর্জনের পাল্লার ভার কম ও আক্ষেপের মাত্রাটাও নিশামেরই বেশি। কখনোই হতে পারেননি আইসিসি ইভেন্টের শিরোপাজয়ী খেলোয়াড়। 

২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনাল হারার পর গাপটিলকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন নিশাম। ছবি : গেটি ইমেজেস

সেদিন দুবাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য যখন প্রয়োজন ১২ বলে ১১ রান, সাউদির করা ১৯তম ওভারের প্রথম বলে প্রাণপণ ডাইভ দিয়েও বলটাকে চার হওয়া থেকে আটকাতে পারেননি। এরপর তো পড়েই রইলেন মাটিতে। ক্যামেরা লেন্সে পড়ে থাকা অবস্থায় কনুইয়ের ফাঁক দিয়ে নিশামের বাম চোখে ছলছল করা গল্পটা কি কেউ পড়তে পেরেছে ?

হয়তো তখনই ৩৩৫ দিনের অঙ্কের হিসাবটাই মেলাচ্ছিলেন। নিশামের ভেতরে বয়ে যাওয়া ঝড়ের বেগটা তখন কিছুটা হলেও তো আঁচ করা যাচ্ছিল। মনের মধ্যে নিশ্চিত আগামী বিশ্বকাপে বন্ধুর পথ সফলভাবে পাড়ি দিতে পারা নিয়ে নানান অনিশ্চয়তাও কাজ করছিল। তাসমান সাগরের সকল ঢেউ তার বুকের ওপর এসে আছড়ে পড়ছিল।

নিউজিল্যান্ডে জনপ্রিয়তায় ক্রিকেটের অবস্থান তৃতীয় ও মৌসুম বিবেচনায় গ্রীষ্মকালীন খেলা হলেও দলটার ক্রিকেটীয় নৈপুণ্যের কখনোই ঘাটতি পড়েনি। যদিও নামের পাশে সবসময় ‘সেমিফাইনালের দল’ ট্যাগটা এমনভাবে লেগে ছিল যে, তাদের কেউই ফেবারিটের তালিকায় জায়গা দিত না। সাদা বলের শেষ চারটি আইসিসি টুর্নামেন্টের তিনটিতে তাদের পারফরম্যান্স নতুন করে  এখন ‘পরাজিত ফাইনালিস্ট’ তকমাটা জড়িয়ে দিয়েছে তাদের গায়ে। 

নিশামের নামের পাশেও তো সেই তকমাটা লেগে আছে। লাল বলের ক্রিকেটে নিয়মিত নন বলে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপার ভাগীদার হতে পারেননি। উইলিয়ামসন লাল বলের শিরোপা জেতার পরেও সাদা বলের শিরোপা না পাওয়ায় আক্ষেপে পুড়ছেন নিশ্চয়ই। কিন্তু, সাদা-লাল বলের কোনো শিরোপা না জেতা নিশামের হতাশাটা কি আরেকটু বেশি নয় ?

এই চিত্র এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল হারের পর। ছবি : গেটি ইমেজেস

এবারের ফাইনালে উঠে আসার পেছনে তো সেমিফাইনালে নিশামের ১১ বলে ২৭ রানের ঝোড়ো ইনিংস বড় ভূমিকা রেখেছে। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালেও তো তিন উইকেট নিয়েছিলেন। সুপার ওভারেও প্রথম পাঁচ বলেই তুলে নিয়েছিলেন ১৩ রান। নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়ার পরও নিশামের প্রাপ্তির খাতাটা সেই শূন্যই থেকে গেল। 

নিশাম আইসিসির শিরোপা জয়ের স্বাদ মাঠ থেকে নিতে পারবেন কি না, তা এক অনিশ্চিত হিসাব। ভবিষ্যতের কথা এই মূহুর্তে বলা সম্ভব নয়। নিতে না পারলে কি আবারও আগের কথায় ফিরে গিয়ে শিশু-কিশোরদের উপদেশ দেবেন, খেলাধুলাকে পেশা হিসেবে না নিয়ে বেকিংকে নিতে, ৬০ বছর বয়সে মোটা শরীরে সুখীভাবে মরার নিশ্চয়তা মেলে।

নাকি ৩৩৫ দিন অপেক্ষা শেষে নতুন কিছু শোনা যাবে তাঁর কাছ থেকে? সে জন্য তো অপেক্ষা ৩৩৫ দিন নয়, তা হবে আরেকটু দীর্ঘ। ফাইনাল পর্যন্ত গেলে তা প্রায় এক বছর। 

প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে, অপেক্ষা কি ৩৩৫ দিনের, নাকি শিরোপার? শিরোপার হলে তো অপেক্ষাটা ৩৩৫ নয়, এক বছর ছুঁয়েই যাবে।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×