তবে তো সব ব্যাটসম্যানকে `অ্যালেন` ভাবলেই পারেন নাছুম!

রিজওয়ান রেহমান সাদিদ

৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

তবে তো সব ব্যাটসম্যানকে `অ্যালেন` ভাবলেই পারেন নাছুম!

নাছুম আহমেদ: দ্বিতীয়বারের মতো ম্যাচ-সেরা। ছবি: বিসিবি

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর প্রথম উইকেটটা ফিন অ্যালেনের। যে কারণে ফিন অ্যালেনকেই বারবার আউট করতে চান তিনি। আরও একবার ফিন অ্যালেনকে আউট করে নাছুম জানালেন, অ্যালেনকে আউট করার পেছনের ভাবনাটাও।

নাছুম আহমেদকে ফিন অ্যালেনের ভোলার কথা নয় এমনিতেই৷ যে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপানোর স্বপ্নটা দেখে এসেছেন আশৈশব, সেই স্বপ্নটা যার কারণে রীতিমতো দুঃস্বপ্নের রূপ নিয়েছিল অভিষেকের প্রথম বলেই, তাঁকে কি আর এক জন্মে ভোলা যায়!

মনে রাখার ঘটনাটা পারস্পরিকই অবশ্য। অ্যালেনের মতো নাছুমের অভিষেকও তো ওই ম্যাচেই। অভিষেকের রোমাঞ্চ কাটানোর সুযোগটুকুও না দিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নতুন বলটা তুলে দিয়েছিলেন নাছুমের হাতে। নাছুম যার প্রতিদান দিয়েছিলেন একদম প্রথম বলেই, বোল্ড করে দিয়েছিলেন ফিন অ্যালেনকে।

নাছুম এরপর উইকেট পেয়েছেন আরও ১৬টি। কলিন ডি গ্র‍্যান্ডহোম তো যেন আটকাই পড়ে গেছেন তাঁর জালে, তিন ম্যাচে মুখোমুখি হয়ে আউট হয়েছেন তিন বার। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর প্রথম উইকেট বলে অ্যালেনকে আউট করাতেই যে বাড়তি আগ্রহ খুঁজে পান নাছুম, স্বীকার করলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার জেতার পর, 'গ্র্যান্ডহোমকে তো আমি আজ নিয়ে তিনবার আউটই করলাম। তবে আমার কাছে ফিন অ্যালেনের উইকেটটা সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। আমার অভিষেক উইকেট ও (অ্যালেন), তাই এর আগের ম্যাচেও আমার লক্ষ্য ছিল যেন ওর উইকেটটা পাই আমি।'

তবে লক্ষ্যটাকে বাস্তব করতে পারলেন এবারই প্রথম। অভিষেকে প্রথম বলেই অ্যালেনকে আউট করার পর থেকে এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত অ্যালেনকে বল করেছেন ১৬টি। নাছুম অ্যালেনকে আউট করতে পারেননি আর একবারও, ৮টা বলে নাছুম কোনো রান না দিলেও অ্যালেন ৫ চার আর ১ ছয় মেরে ২০০ ছাড়ানো স্ট্রাইক রেটে ঠিকই তুলেছেন ৩৩ রান। অভিষেকের জ্বালা জুড়াচ্ছিলেন নাছুমকে মেরে-টেরে একাকার করেই।

অ্যালেন আজও আভাস দিচ্ছিলেন বড় কিছুরই। মিরপুরের মন্থর উইকেটেও সাকিব আল হাসানকে রিভার্স সুইপ করে ছয় হাঁকিয়েছিলেন ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই, নাছুমের করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারেও রিভার্স সুইপকেই বানাতে চাইছিলেন আক্রমণের অস্ত্র। তা বুঝতে পেরেই জোরের ওপর বল করেছিলেন নাছুম; যা প্রত্যাশা করেছিলেন, তার চেয়ে কিছুটা খাটো লেংথে বল পড়ায় অ্যালেন একটু হকচকিয়েই যান। ফলাফল মিস টাইমিং, ৩০ গজের বৃত্তের কিছুটা বাইরে ক্যাচ দিয়েই অ্যালেনের বিদায়।ফিন অ্যালেনের উইকেট পাওয়ার পর

নাছুম জানাচ্ছেন, জোরে বল করার পরিকল্পনাটা তাঁর মাথায় খেলে গিয়েছিল হুট করেই, 'ফিন (অ্যালেন) যখন রিভার্স সুইপ করছিল, তখন রিয়াদ ভাই আমাকে বলল, "ও রিভার্স (সুইপ) করলে তুই আরেকটু আস্তে বল করবি।" তো আমি যখন বোলিং করছি, তখন দেখলাম, ও একটু আগেই ঘুরে গেছে। ওটা দেখে আমি জোরে বল করেছি, তাতে মিস টাইমিংয়ে উইকেটটা পেয়ে গেছি।'

এখন পর্যন্ত যে ১৩টি ম্যাচ খেলেছেন, তাতে উইকেট এনে দিচ্ছেন নিয়মিত, পাওয়ার-প্লেতে নিয়মিত বল করেও ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন মাত্র ৬.০৭। ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কারও জিতে নিয়েছেন দুবার। নাছুমই জানালেন, টিম ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে সমর্থনটাও পাচ্ছেন যথাযথ। উইকেট এনে দিতে হবে, এই করতে হবে, ওই করতে হবে… নেই এমন কোনো চাপও।

মাহমুদউল্লাহ সম্ভবত মুচকি হাসবেন এই কথা শুনে। নিজের মাথা খাটিয়েই যখন উইকেট আনার উপায় বের করছেন নাছুম, তাঁকে আর পরামর্শ দেওয়ার দরকার কী!

আরও পড়ুন:

বাদ পড়ার ভয় জয় করেই এই নাছুম

নাছুমের গল্পটা কি জানেন?

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×