পাউন্ড উড়ছে শোয়েব আখতারের চারপাশে

উৎপল শুভ্র

১৩ আগস্ট ২০২১

পাউন্ড উড়ছে শোয়েব আখতারের চারপাশে

১৯৯৯ বিশ্বকাপের সবচেয়ে পরিচিত ছবিগুলোর একটি। ছবি: গেটি ইমেজেস

১৯৯৯ বিশ্বকাপে তাঁর চেয়ে বেশি রান করেছিলেন প্রায় সবাই, উইকেট-সংখ্যাতেও তাঁর ওপরে ছিলেন অনেকে। তবু ওই বিশ্বকাপের সবচেয়ে আলোচিত তারকা ছিলেন শোয়েব আখতারই। এমনই যে, `বিশ্বের দ্রুততম বোলারকে খেলার অভিজ্ঞতা কেমন`..এমন প্রতিবেদন লিখতে সানডে টাইমস গুনেছিল দু`হাজার পাউন্ড!

প্রথম প্রকাশ: ৩০ মে ১৯৯৯। প্রথম আলো।

'উহ, কী ঠাণ্ডা, আমি জমে যাচ্ছি',...বেশ কয়েকবার এ কথা বললেন শোয়েব আখতার। তারপরও টিম কাল হোটেলে ফিরে যাওয়ার পর নর্দাম্পটন কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব মাঠে প্রায় আধ ঘন্টা কাটাতে হলো তাঁকে। অধিনায়ক অবশ্য সঙ্গ দিলেন পুরোটা সময়। ঘাসের মধ্যে পোঁতা তিনটি স্টাম্প থেকে ২২ গজ অনুমান করে একটা চিহ্নও দিয়ে দিলেন ওয়াসিম আকরাম। ট্র্যাকসুট আর কেডস পরা শোয়েব আখতার বোলিং করতে শুরু করলেন।

তাঁকে বিশ্বের দ্রুততম বোলার বলা হয় যে কারণে, তা অবশ্য খুঁজে পাওয়া গেল না সেই বোলিংয়ে। অর্ধেক পেসে বল করলেন শোয়েব, তারপরও চেস্ট গার্ড, আমগার্ড, হেলমেট নিয়ে প্রায় নভোচারীর চেহারা নেয়া ব্যাটসম্যানটি ব্যাটে বল লাগাতে পারলেন মাত্র দু/তিনবার। তাতে অবশ্য তাঁর খুব একটা মন খারাপ হলো না। ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের সামর্থ্য তাঁর ভালোই জানা, এককালে টুকটাক ক্রিকেট খেলেছেন, তাই বলে শোয়েব আখতারকে খেলা?

`৯৯ বিশ্বকাপে শোয়েব। ছবি: গেটি ইমেজেস

সেটাই খেললেন নাইজেল ফার্নডেল। সানডে টেলিগ্রাফ পত্রিকার ফিচার লেখক 'বিশ্বের দ্রুততম বোলারকে খেলার অভিজ্ঞতা' শীর্ষক একটি রচনা লিখতে চান। সে জন্যই এত আয়োজন। ফার্নডেল তাঁর সমরসজ্জা ছেড়ে স্বাভাবিক হতে হতে বললেন, 'ও তো অর্ধেক পেসে বল করল। তারপরও ২২ গজ দূর থেকে ওর রানআপ, ডেলিভারির সময় শেষ ধাপটা দেখা এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। লেখাটা মনে হয় ভালোই হবে।'

কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে এই যে শোয়েব আখতার তাঁকে বল করে গেলেন, ব্যাটে বল লাগলেই তালি দিলেন কাভার পজিশনে দাঁড়ানো ওয়াসিম আকরাম, সেগুলো এমনিতেই নয়। এ জন্য সানডে টেলিগ্রাফকে শুনতে হয়েছে দুই হাজার পাউন্ড। মিনিট দশেকের বোলিং, এরপর ফার্নডেলের চোখে চোখ রেখে ছবির জন্য পোজ দেয়া..কাজ বলতে এই তো। দুই হাজার পাউন্ড খারাপ কী!

টাকা-পয়সা অবশ্য ইদানীং শোয়েব আখতারের জন্য কোনো ব্যাপারই নয়। 'বিশ্বের দ্রুততম' হয়েই বিশ্বকাপে এসেছিলেন, সেই মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়নি এখানেও। কাউন্টি দলগুলো কাড়াকাড়ি শুরু করেছে তাঁকে নিয়ে। শোয়েব নিজেই জানালেন, 'তিনটি কাউন্টি এরই মধ্যে অফার দিয়েছে। তবে নাম বলছি না এখন। দেখি, শেষ পর্যন্ত কারা সবচেয়ে বেশি অফার দেয়। কাউন্টিতে খেলবেন এটা চূড়ান্ত, তবে আগামী ম্যাচগুলোর পারফরম্যান্স দিয়ে বাজার দরটা আরও বাড়াতে চান শোয়েব, 'এখন পর্যন্ত এই বিশ্বকাপে আমার পারফরম্যান্সে আমি সন্তুষ্ট নই। সামনের ম্যাচগুলোতে আরও ভালো করতে চাই।'

একেবারে সামনের ম্যাচটিতে শোয়েবের সামনে বাংলাদেশ। তাঁকে বিশ্রাম দিয়ে ওয়াকার ইউনিসকে একটা সুযোগ দেয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে, সেটি হলেই বোধ হয় ভালো। ওয়াকারও নিজেকে প্রমাণ করতে মরিয়া হয়েই নামবেন। তবে 'বুরেওয়ালা বোম্বশেল' সাবেক দ্রুততম, শোয়েব 'বর্তমান'। তার চেয়েও এখন বড় কথা, প্রতিটি উইকেটকে এখন হাজার পাউন্ডের সমান দেখছেন শোয়েব।

আরও পড়ুন:

গতির নেশায় বুঁদ শোয়েব আখতার

উৎপল শুভ্রর নেওয়া শোয়েব আখতারের একান্ত সাক্ষাৎকার

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×