ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় অঘটনের সাক্ষী 

কাজী তাপস

১৮ জুন ২০২১

ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় অঘটনের সাক্ষী 

বিশ্ব ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া তখন প্রায় অজেয় দল। রিকি পন্টিংদের সেই অস্ট্রেলিয়াকেই ‌ত্রিদেশীয় ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে হারিয়ে দিল বাংলাদেশ। কার্ডিফে বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় সেই জয়ের সাক্ষী ছিলেন পেশায় সাংবাদিক এই লেখক। সেই অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশের পুরো ইংল্যান্ড সফরটাই উঠে এসেছে তাঁর স্মৃতিচারণায়।

ক্রিকেটে অলরাউন্ডারদের স্বীকৃতি থাকলেও আমাদের বেলায় অর্থাৎ সাংবাদিকতায় তা নাই। থাকলে এই অভাজন নিশ্চয়ই তা দাবি করতে পারত। সেই ১৯৮৫ সাল থেকে আমি উন্মাদ, মানে সহকারী উন্মাদক অর্থাৎ স্যাটায়ার পত্রিকা উন্মাদের সহকারী সম্পাদক। প্রথম সিরিয়াস সাংবাদিকতা শুরু করলাম ‘ভোরের কাগজে’ ক্রাইম রিপোর্টার হিসেবে। ক্রাইমের সাথে যেহেতু পলিটিকসের নিবিড় সম্পর্ক, তাই মাঝে মধ্যেই ‘বিবিসি-খ্যাত’ সহকর্মী কাদির কল্লোলের সাথে রাজনৈতিক সভা সমাবেশও কাভার করতে শুরু করলাম। যেহেতু আমার প্যাশন ছিল ইলেকট্রনিক সাংবাদিকতা, আমি তাই ভোরের কাগজের সম্ভাবনাময় কাজ ছেড়ে তখন দেশের সবেধন নীলমণি বিটিভি’র অতিথি প্রযোজক হিসেবে যোগ দিলাম। বিটিভিতে গিয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই আমার ক্রীড়া সাংবাদিকতা শুরু। এরপর একুশে টিভি, এনটিভিতেও প্রযোজনার পাশাপাশি আমার ক্রীড়া সাংবাদিকতাও অব্যাহত রইল।

এর মধ্যেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, টেস্ট মর্যাদা পেয়েছে, ভারতের সাথে খেলে টেস্ট অভিষেকও হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাথে একটু একটু করে আমার অভিজ্ঞতাও বেড়েছে। ২০০৫-এ বাংলাদেশ নবীন টেস্ট দল হিসেবে ক্রিকেটের সূতিকাগার ইংল্যান্ড সফরে যাবে। বাংলাদেশের সেই ঐতিহাসিক সফর কাভার করার জন্য এনটিভি থেকে আমি এবং সহকর্মী নাসিমুল হক দোদুল সুযোগ পেলাম। এখানেও আমি অলরাউন্ডার, মানে দোদুল যেখানে শুধু স্পোর্টস রিপোর্টার; সেখানে আমি ক্যামেরাম্যান, ভিডিও এডিটর, প্রোডিউসার কাম রিপোর্টার! ইংল্যান্ড যাবার আগে আমাকে ক্যামেরা চালনা, ভিডিও সম্পাদনা এবং ইন্টারনেটে তা পাঠানোর কৌশল জানতে রীতিমতো ক্র্যাশ প্রোগ্রামে অংশ নিতে হয়েছে। বিলাত সফর বলে কথা!

যাই হোক, ‘ক্রিকেটের মক্কা’ লর্ডস মাঠে গিয়ে তো আমার চোখ ছানাবড়া! এত সুন্দর মাঠ! মনে হলো, কেডস খুলে খালি পায়ে হাঁটি...যা-ই দেখি, তাতেই মুগ্ধ! কিন্তু ২৬ মে লর্ডসে প্রথম টেস্ট ম্যাচ শুরু হতেই বুঝে গেলাম...হাউ মেনি প্যাডি, হাউ মেনি রাইস! মাত্র ৩৮ ওভার দুই বলে বাংলাদেশ ১০২ রানে অলআউট! সর্বোচ্চ ২২ রান জাভেদ ওমর বেলিমের। জবাবে ট্রেসকোথিকের ১৯৪ আর অধিনায়ক ভনের ১২০ রানে তিন উইকেটেই ৫২৮ রান করে ইনিংস ঘোষণা করল ইংল্যান্ড, মাশরাফি নিলেন ২ উইকেট। জবাবে বাংলাদেশ একটু ভালো করল...৩৯ ওভার ৫ বলে ১৫৯! ফলাফল ইনিংস এবং ২৬১ রানের বিশাল পরাজয়! বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে ঠোটকাঁটা জিওফ বয়কট বলে বসলেন, তাঁর দাদীও নাকি এর চাইতে ভালো ব্যাট করতে পারতেন! আড়াই দিনেরও কম সময়ে হেরে মাঠ ছাড়ার সময় শুনি, লাউড স্পিকারে ঘোষণা হচ্ছে ‘যারা পাঁচ দিনের টিকেট কেটেছিলেন, তাদের টাকা ফেরত দেয়া হবে’! লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছিল!

 লর্ডসে প্রথম টেস্টে ২ উইকেট নিয়েছিলেন মাশরাফি। ছবি: গেটি ইমেজেস

পরের টেস্ট ডারহামে। চেস্টার-লি-স্ট্রিটের রিভারসাইড স্টেডিয়ামে। ছবির মতো সুন্দর স্টেডিয়াম, পাশেই নদী, একটু দূরেই ডারহাম ক্যাথেড্রালের টাওয়ার দৃশ্যমান। কিন্তু টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে সেই বাংলাদেশ, ১০৪ রানে অল আউট! জাভেদ ৩৭, পাইলট ২২। আবারও ট্রেসকোথিকের ১৫১ আর নবাগত ইয়ান বেলের ১৬২ রানে তিন উইকেটে ৪৪৭ রান করেই ইনিংস ঘোষণা করল ইংল্যান্ড। মাশরাফি আবারও পেলেন ২ উইকেট। ইংল্যান্ড ধরেই নিয়েছিল, তিন শর বেশি রান চেজ করে জিততে পারবে না বাংলাদেশ ,পারেওনি, কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ যে এরকম ঘুরে দাঁড়াবে তা-ও ভাবেনি। জাভেদ ওমরের ৭১, অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের ৬৩ এবং আফতাবের ৮২ বলে ৮২ রান ম্যাচটাকে তৃতীয় দিনে তো নিলই, ইংল্যান্ডকে আবারো ব্যাটিংয়ে নামানোর ক্ষেত্রও প্রায় তৈরি করে ফেলেছিল। কিন্তু তৃতীয় দিন খেলা হলো মাত্র ১৭ মিনিট। বাংলাদেশ ৩১৬ রানে অলআউট হয়ে গেলে ইনিংস ও ২৭ রানের ব্যবধানে হেরে যায় বাংলাদেশ। 

বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস দেওয়া আদৌ ঠিক হয়েছে কি না, এই প্রশ্নে তখন ইংল্যান্ডের আকাশ বাতাস মুখরিত! আমরা অনেকটা মুখ লুকিয়ে প্রেসবক্সে ঢুকি আর বের হই! ১৬ জুন ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের ত্রিদেশীয় ন্যাটওয়েস্ট ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে ১০ জুন ডার্বিশায়ারের সাথে তাদের মাঠে একটা প্রস্তুতি ম্যাচ ছিল। লন্ডন থেকে বাসে প্রায় ছয় ঘন্টার দূরের পথ হওয়ায় বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিকদের অনেকেই সেখানে গেলেন না। ঠিক হলো, যেহেতু বাংলাদেশের টিভি সাংবাদিকদের মধ্যে আমি ক্যামেরা চালাতে পারি, তাই আমি এবং খ্যাতিমান আলোকচিত্রী মীর ফরিদ যাব ডার্বিশায়ারে (উদ্দেশ্য আমাদের কাছ থেকে ছবি নিয়ে, ক্রিকইনফোর তথ্য দিয়ে বাকিদের কাজ চালিয়ে নেয়া। অবশ্য শুভ্রদা ঠিকই ছিলেন মাঠে, তিনি সবসময়ই ব্যতিক্রম!)। যথারীতি বাংলাদেশ ম্যাচ হারল, কিন্তু আমরা দারুণ একটা এক্সক্লুসিভ পেয়ে গেলাম !

 ডার্বিশায়ারের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের সাবেক কোচ এডি বারলো। ছবি: শা. হ. টেংকু

গর্ডন গ্রিনিজের পর ১৯৯৯ সালে জাতীয় দলের কোচ হয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অলরাউন্ডার এডি বারলো। বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস পাবার পর তাঁর মতো ‘ক্রিকেট ব্রেইনের’ খুব প্রয়োজন ছিল! 

কিন্তু দুর্ভাগ্য ব্রেইন স্ট্রোকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে দুঃখজনকভাবে বিদায় নিতে হয়েছিল তাঁকে। ডার্বিশায়ারের হয়ে মাঠ কাঁপানো এডি বারলোকে পাওয়া গেল মাঠে, হুইল চেয়ারে এসেছেন শিষ্যদের খেলা দেখতে, সাথে স্ত্রী কেলি। বাংলাদেশকে নিয়ে তাঁর আস্থা আর বিশ্বাস দেখে আমরাই অবাক হয়ে গেলাম। সাক্ষাৎকারে এক চোট নিলেন সেই সব বৃটিশ ক্রিকেটবোদ্ধাদের, যারা বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা নিয়ে অমর্যাদাকর কথা বলছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার স্বর্ণযুগের সেই অলরাউন্ডার মনে করিয়ে দিলেন, তাদের হাতে যখন ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া এরকম ধবল ধোলাইয়ের শিকার হতো, তখন তো কেউ বলেনি যে, ওদের টেস্ট মর্যাদা কেড়ে নেয়া হোক ! দারুণ উজ্জীবিত বোধ করলাম ।

সেই টনিকেই কিনা জানি না, ১২ জুন উস্টারে উস্টারশায়ারের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে সফরে প্রথম জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ! জাভেদ ওমরের ৪৩ আর অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের ২৬ রানে ৬ উইকেটের জয়। আমরাও একটু আশাবাদী হলাম।

কিন্তু ১৬ জুন মূল টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচের দিন যে-ই কি সেই ! আফতাবের ৫১ রানে বাংলাদেশ করল ১৯০। কিন্তু দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ট্রেসকোথিকের অপরাজিত শতরানে ইংল্যান্ড আরও দুই রান বেশি করল কোনো উইকেট না হারিয়েই। এই সিরিজের কিছুদিন পরই ট্রেসকোথিকের অবসাদজনিত কারণে ক্রিকেটকে বিদায় বলার পেছনে এই সব ধারাবাহিক শতরানের কোনো অবদান আছে কিনা জানি না !

ট্রেসকোথিক এক শ করেছিলেন ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে। ছবি: গেটি ইমেজেস

পরের ম্যাচ ১৮ জুন ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার সাথে। ফলাফল নিশ্চিত জেনে আমরা ১৭ জুন কার্ডিফ যাওয়ার আর ১৯ জুন ফিরতি ট্রেনের টিকেট কেটে ফেলেছি, হোটেলও (ওরা বলে বি বি, বেড এন্ড ব্রেকফাস্ট) বুক করেছি দুই দিনের জন্য। আমরা ইসিবি বলতে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড বুঝলেও আসলে ওটা ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড। ইউনিয়ন জ্যাকের অধীনে থাকলেও তাদের জাত্যাভিমান প্রবল (ভুলে এক ট্যাক্সি ড্রাইভারকে ইংলিশ বলে ফেলায় সে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে জানিয়েছিলেন: I AM NOT EINGLISH, I AM WELSH!!!) সেই কার্ডিফের একটা বাগানের নাম সোফিয়া গার্ডেন, কোন ধনাঢ্য ওয়েলশ্ তার স্ত্রী সোফিয়ার স্মৃতির উদ্দেশে এই বাগান করেছিলেন (ওয়েলসের তাজমহল আরকি!)। সেই সোফিয়া গার্ডেনের একটা অংশে ক্রিকেট স্টেডিয়াম, ভাবা যায়!

তবে লর্ডস, ওভালের মাঠ দেখে আসার পর পাড়ার মাঠ বলেই মনে হলো। কাঠের গ্যালারি, প্রেসবক্সও ছোট...এত ছোট যে, আমাদের বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সেখানে জায়গা হলো না! গ্যালারির একটা অংশে ত্রিপল টানিয়ে ডেকোরেটরের টেবিল দিয়ে বসার ব্যবস্থা হলো। খোলা আকাশের নিচে ইংলিশ সামারের তেজ টের পাচ্ছিলাম। কিন্তু খেলা শুরু হতেই সব হাওয়া...ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই মাশরাফি এলবিডব্লিউ করলেন গিলক্রিস্টকে। অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দুই অঙ্কে যাওয়ার আগেই তাপস বৈশ্য ফিরিয়ে দিলেন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক রিকি পন্টিংকে ! তখনও আমরা বুঝিনি যে...আজ কিছু হতে চলেছে....!!!  ৫৭ রানে দৈত্যাকার ম্যাথু হেইডেনকে নাজমুল হোসেন বোল্ড করলে কেমন জানি মনে হতে শুরু করল। কিন্তু এরপরই ডেমিয়েন মার্টিন আর মাইকেল ক্লার্কের শতরানের জুটিতে আবারও অস্ট্রেলিয়া স্বমূর্তিতে ফিরল। ৭৭ রানে ডেমিয়েন মার্টিনকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরালেন তাপস বৈশ্য। এরপর মাশরাফি, মাইকেল ক্লার্ককে ৫৪ রানে আউট করে অস্ট্রেলিয়াকে ২৫০-এর নিচে আটকানোর বড় কাজটি করে দিলেন। আমি তখন ক্যামেরা-মাইক্রোফোন নিয়ে ছুটলাম সোফিয়া গার্ডেনের এমন জায়গায়, যেখান থেকে স্কোরকার্ড দেখা যায়। কিন্তু সেটা ইসিবির আওতাভুক্ত এলাকা নয়! কারণ আমাদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের শর্ত অনুযায়ী আমরা খেলার আগের প্র্যাকটিস সেশন আর প্রেস কনফারেন্স ছাড়া আর কিছুই কাভার করতে পারব না। লর্ডসে এই মর্মে আমাকে সতর্ক করে দেয়ায় আমিও একটু শেকি ছিলাম। আমি চাইছিলাম মধ্য বিরতির এই ফাঁকে একটা মিড পিটিসি (টেলিভিশন রিপোর্টার সাধারণত রিপোর্টের শেষে যে কথা ক্যামেরায় বলে) দিয়ে ফেলি।

প্রথম ধাক্কাটা মাশরাফিই দিয়েছিলেন। ছবি: গেটি ইমেজেস

তো সোফিয়া গার্ডেনের এক কোনায় দাঁড়িয়ে …‘বিশ্ব চাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে ২৫০ রানের নিচে আটকে দেয়াটা কম কথা নয়…'এমন একটা মিড পিটিসি দিয়ে ফেললাম। কিন্তু ব্যাট হাতেও যেন অন্য বাংলাদেশ! যদিও শুরুটা খুব ভালো হলো না। ১৭ রানের মাথায় নাফিস ইকবাল আউট। তবে তুষার ইমরানকে বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হলো। তিনি করলেন ২৪ রান। জাভেদ ওমর পুরো সফরেই ভালো খেলেছেন, সেদিনও ১৯ রান করলেন। সব চাইতে বড় কথা, দ্বিতীয় উইকেট যখন পড়ল, তখন বাংলাদেশ ৫০ করে ফেলেছে, ওই সময় এটা বিশাল ব্যাপার ছিল!

তুষার ইমরানের পর মাঠে নামলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। তাঁর সাথে ২১ রানের জুটি গড়ার পর জাভেদ ওমর আউট। দলের স্কোর তখন ৭২। অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন আর আশরাফুলের জুটিতেই আসলে বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। তাঁদের ১৩০ রানের জুটিতে বাংলাদেশ জয়ের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিল... কিন্তু এ রকম পরিস্থিতিতে ম্যাচ হারার অভ্যাস বাংলাদেশের তখন বেশ ভালোই ছিল। 

তাই আমাদের মনে কু-ডাক দেয়া শুরু করল। তখনও আশার নাম আশরাফুল। সেঞ্চুরি থেকে গোটা বিশেক রান দূরে! মাকগ্রাকে চার মেরে শতরান পূরণ করেই সোফিয়া গার্ডেনের পিচে সেজদা করলেন আশরাফুল (পরদিন ব্রিটিশ ট্যাবলয়ডে বিশাল সেই ছবি দিয়ে ক্যাপশনে লিখল KISS OF DEATH )। সেই ১০০ রানেই গিলেস্পির বলে আউট আশরাফুল। কিন্তু আফতাব আর তখনকার হার্ড হিটার মোহাম্মদ রফিক কোনো আশঙ্কার মেঘ জমতে দিলেন না। আফতাব আগে থেকেই ভালো খেলছিলেন, আর রফিক নেমেই দুই চার মেরে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে দিলেন দলকে। শেষ ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকিয়েই সব টেনশনের অবসান ঘটালেন আফতাব। স্কোর সমান ২৪৯, পরের বলে আফতাব এক রান নিলে তখনকার ক্রিকেট বিশ্বের প্রায় অজেয় পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দিল 'পুঁচকে' বাংলাদেশ!

যে ছবির ক্যাপশনে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড লিখেছিল, `KISS OF DEATH`. ছবি: গেটি ইমেজেস

একটু ক্ষতিও হলো... আমাদের বাংলাদেশের বেশির ভাগ সাংবাদিকের ধারণা ছিল, ১৮ জুন নিশ্চিত পরাজয়ের পরদিন সকালেই আমরা পরবর্তী গন্তব্য নটিংহামের উদ্দেশে রওনা দেব। কিন্তু বাংলাদেশ জিতে যাওয়ায় সব পণ্ড। ট্রেনের টিকেট বাতিল, হোটেল বুকিং আবার করতে হলো...পরদিন সকালে বাংলাদেশ টিম নটিংহামের উদ্দেশে যাত্রা করবে। তাদের সাথে কথা বলতে সবাই উন্মুখ! আমি বাংলাদেশ দলের ওই সফরের মিডিয়া ম্যানেজার আশিস কালেকে বলে আশরাফুলের সাক্ষাৎকার নেবার অনুমতি নিয়ে নিলাম। কিন্তু সকালে হোটেলে গিয়ে দেখি, আশরাফুল দলের সাথে নেই! নাস্তা করতে বাইরে গেছে...(আসলে উৎপল শুভ্রদা তাঁকে ধরে আগেই সাক্ষাৎকার বাগিয়ে নিয়েছেন)।

আশরাফুল হোটেলে ফিরতেই আমি তাঁর সাক্ষাৎকার নিলাম...এমনিতেই টিম বাস ছাড়তে দেরি হচ্ছে বলে কোচ ডেভ হোয়াটমোর রেগে আগুন! সাক্ষাৎকার শেষ হতেই তাঁর সব ক্ষোভ এসে পড়ল আমার ওপর। তাঁর প্রশ্ন, বাস ছাড়ার দেরির কারণে দলের যে ক্ষতি হলো, সেই ক্ষতিপূরণ আমি দেব কি না! স্কাই টিভির সাংবাদিকের মধ্যস্থতায় শেষ পর্যন্ত জরিমানা না দিয়েই পার পেলাম!

২০০৫-এর সেই বিলেত সফরে সেটাই বাংলাদেশের একমাত্র জয় হয়ে থাকলেও, ওই একটা জয়ই পাল্টে দিল বাংলাদেশের চেহারা, সেই সাথে আমাদেরও।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×