মেসিকে হারিয়ে বার্সার চেয়েও বড় সর্বনাশ লা লিগার

কাশীনাথ ভট্টাচার্য

১০ আগস্ট ২০২১

মেসিকে হারিয়ে বার্সার চেয়েও বড় সর্বনাশ লা লিগার

মেসি অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিদায় নিয়েছেন বার্সেলোনা থেকে এবং এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন। দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলারদের সঙ্গে বার্সার অতীত ইতিহাস মাথায় রাখলে এমন বিদায়ই অবশ্য স্বাভাবিক। ম্যারাডোনা থেকে শুরু করে রিভালদো-রোনালদিনহো হয়ে সুয়ারেজ..এই তালিকাতেও সর্বশেষ সংযোজন মেসি। তবে মেসিকে হারিয়ে বার্সার চেয়েও বড় ক্ষতিটা অবশ্য লা লিগার।

দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলারদের সঙ্গে বার্সেলোনার শেষটা বরাবরই তিক্ত! ডিয়েগো ম্যারাডোনা, রোমারিও, রোনালদো, রিভালদো, রোনালদিনহো, নেইমার, সুয়ারেজ–সবাইকেই ছেড়ে যেতে হয়েছে মন কষাকষি কখনো তীব্র, কখনো মৃদু হলেও না-থাকার মতো অবস্থা সাজঘরে তৈরি করা হয়েছিল বলেই। লিওনেল মেসি ছিলেন ব্যতিক্রম, লা মাসিয়া থেকে উঠে এসে। শেষ-কান্নায় মিলে গেলেন বাকিদের সঙ্গে!

বার্সেলোনা বিচ্ছেদ-ঘোষণার দিন থেকেই প্রশ্নগুলো ঘুরছে মাথায়। এমন তো নয় যে, লা লিগার ‘স্যালারি-ক্যাপ’ নিয়ে সেই দিনই বার্সেলোনা জেনেছিল! তা হলে, আগে থেকে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? কেন মিথ্যে প্রতিশ্রুতি হাওয়ায় ভাসানো হয়েছিল যে, মেসি থাকছেন? নিজের মাইনে পঞ্চাশ শতাংশ কমাতেও রাজি হয়েছেন? কেন সার্জিও আগুয়েরো বা মেম্ফিস ডিপাইকে সই করানো হলো? এবং, এখন মেসির বিদায়ের পর কেনই বা দুজনকে চলে যাওয়ার কথা ঠারেঠোরে বোঝানো হচ্ছে? ‘স্যালারি’-র নুন আনতে পান্তা ফুরোচ্ছে যে ক্লাবের, তারা কেনই বা আঁতোয়ান গ্রিজমানের মতো তারকাকে প্রচুর মাইনে দিয়ে সই করিয়েছিল? গত বছর মেসি যখন চলে যেতে চেয়েছিলেন, কেনই বা তাঁকে আইনি জটিলতার প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে থেকে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল?

বার্সেলোনা-বিদায় পর্বটা সুখকর হবে না মেসির, নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল সেই দিনই, যখন মেসি নিজে থেকেই দল ছাড়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলেন ব্যুরোফ্যাক্সে, গত বছর। কাতালানরাই আওয়াজ তুলেছিলেন, যখন দেখার কেউ ছিল না, প্রতি মাসে হাজার ডলার খরচ করে মেসির শারীরিক সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নিয়েছিল যে বার্সেলোনা, কী করে সেই ক্লাব ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতে পারেন মেসি?

​​​​​অদ্ভুত এই কাতালান বিপ্লব আর সেই বিপ্লবীদের মানসিকতা! তাঁরা স্পেন থেকে সরে আসতে চান, মিটিং-মিছিল ভোটাভুটি করেন, বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে ভোট পড়ে বেশি, তারপরও থেকে যান কোনো এক অজ্ঞাত কারণে, আর রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকরা আরও বেশি বিদ্রুপ করেন ‘দেশদ্রোহী’ বলে! স্পেন থেকে কাতালুনিয়া সরে গেলে লা লিগায় খেলবেন কী করে, প্রশ্নে উত্তাল হয় তাদের দুনিয়া। আবার সেই লা লিগার নিয়ম মেনে চলতে গিয়েই মেসিকে বলির পাঁঠা করতে পনেরো দিনের বেশি ভাবতে হয় না তাদের!

২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর কার্ল রেক্সা যখন পেপার-ন্যাপকিনে সই করিয়েছিলেন ছোট্ট মেসিকে, লেখা হয়েছিল, ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার ফুটবল-ডিরেক্টর হিসাবে নিজ দায়িত্ব সই করাচ্ছেন। সেই ‘পেপার ন্যাপকিন’ এখন ফ্রেমবন্দি হয়ে বার্সেলোনার দেওয়ালে। খরচের অপ্রিয় কথা যখন তুলেই ছিলেন কাতালান-সমর্থকরা, উত্তরটাও ওঁদের মতো অপ্রিয় ভাষাতেই দেওয়া চলত যে, কুড়ি বছরে মেসি মিলিয়ন-মিলিয়ন ডলার এনে দিয়েছিলেন বার্সেলোনাকে। মেসি কখনো বলেননি।

ঠিক এই কারণেই তিনি ডিয়েগো ম্যারাডোনা নন! 'যেমন কুকুর তেমন মুগুর' বলে বাংলার প্রাচীন একটি প্রবাদ রয়েছে। ম্যারাডোনা আগাগোড়া বিশ্বাস রেখেছিলেন তাতে। চলুন একটু পিছিয়ে ম্যারাডোনার বার্সেলোনা পর্বে ঘুরে আসা যাক।

ম্যারাডোনার বার্সা-বিচ্ছেদ
বার্সেলোনার তখনকার সভাপতি হোসে লুইস নুনেজের সঙ্গে সম্পর্কটা কখনোই ঠিকঠাক ছিল না ম্যারাডোনার। তবুও, তাঁকে সই করানো হয়েছিল রেকর্ড মূল্যে এবং ইউরোপে ম্যারাডোনার প্রথম ক্লাব ছিল বার্সেলোনাই। বিরাশিতে স্পেন বিশ্বকাপে ব্যর্থতা সঙ্গী করেই বার্সেলোনায় এসেছিলেন ম্যারাডোনা।

সম্পর্ক খারাপ হওয়া শুরু ম্যারাডোনা হেপাটাইটিস-এ আক্রান্ত হওয়ার পর। পেটোয়া কিছু সাংবাদিক ছিল নুনেজের, অভিযোগ সরাসরি জানিয়েছেন ম্যারাডোনা। তাঁদের দিয়ে নুনেজ লেখানো শুরু করেন, কী কী কারণে হেপাটাইটিস হয়েছে। মহিলাসঙ্গ, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাইরে বেরোনো, অত্যধিক লোকের (পড়ুন মহিলা) সঙ্গে অবাধ মেলামেশা ইত্যাদি। জার্মান কোচ উদো লাটেকের সঙ্গে ঝামেলা ছিল শুরু থেকেই। ম্যারাডোনা বরাবর বিরোধিতা করে এসেছিলেন ওজন ঘাড়ে বয়ে ফুটবল মাঠে অনুশীলনের, সেই কারণে। তা ছাড়া, ম্যাচের দিন সকাল সাড়ে আটটায় কোচ ফুটবলারদের নিয়ে হাঁটতে বেরোতেন, যা একেবারেই অপছন্দ ছিল ম্যারাডোনার। সেই ঝামেলার কথাও নুনেজকে জানিয়েছিলেন জার্মান-কোচ, যে কারণে রেগে কাঁই প্রেসিডেন্টও!

 

কোপা দেল রে ফাইনালে সামনে রিয়াল মাদ্রিদ। তার আগে জার্মান পল ব্রাইটনারের বিদায়ী ম্যাচের জন্য বার্সেলোনা থেকে বার্নড শুস্টার ও ম্যারাডোনাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন ব্রাইটনার। দুজনেই জানিয়েছিলেন, যাবেন, অবশ্যই। কিন্তু, নুনেজ দেননি যেতে। আটকে রেখেছিলেন ম্যারাডোনার পাসপোর্ট, যা ক্লাবের কাছে ছিল ইউরোপীয় ম্যাচ খেলতে যাওয়ার কারণে। দেখা করতে চেয়েছিলেন ম্যারাডোনা, নুনেজ দেখা করেননি। তৃতীয় দিন এমন হওয়ার পর ম্যারাডোনা তখন বসে ছিলেন বার্সেলোনার ট্রফি-রুমে। বাইরে নুনেজের গাড়ি এবং চালককে দেখতে পেয়েছেন, অথচ, কর্তারা বলছেন, নুনেজ নেই!

ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছিল ম্যারাডোনার। হাতের সামনে সবচেয়ে সুন্দর যে ট্রফি ছিল, মাথার ওপর তুলে চিৎকার করেই হুমকি, ‘দেখা না করলে আছড়ে ভাঙব। শুধু এই ট্রফিটা নয়, যতক্ষণ দেখা করবেন না, ভাঙতেই থাকব একের পর এক।’ বলেছে কিন্তু ভাঙবে না নিশ্চয়ই, ভেবেছিলেন সভাপতির কাছের কর্তারা। সেই ভাবনা ভুল বোঝাতে সেই কর্তার সামনেই আছড়ে কাচের ট্রফি টুকরো টুকরো। নুনেজ বেরিয়ে এসেছিলেন। কথা বলেছিলেন, 'দেব না, দেব না' বললেও পাসপোর্ট ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন, ভাঙা ট্রফির কাচের টুকরো মেঝেতে ছড়িয়ে থাকতে দেখে! কিন্তু, ব্রাইটনারের আমন্ত্রণ রক্ষা করা সম্ভব হয়নি ম্যারাডোনা-শুস্টারের।

হোসে মারিয়া গার্সিয়া নামের এক সাংবাদিকের সঙ্গে ম্যারাডোনাকে কথা বলতে বারবার বারণ করেছিলেন নুনেজ। কারণ, সেই সাংবাদিক সমালোচনা করতেন নুনেজের। ম্যারাডোনা সেই নির্দেশও মানেননি। ‘যতক্ষণ ট্রেনিং করছি আর খেলছি, আমাকে আর কোনো ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়ার আপনি কেউ নন। আমি কার সঙ্গে কথা বলব বা বলব না, আমিই ঠিক করব। আপনার ক্লাবের সঙ্গে আমার খেলার চুক্তি, বাকি আমি কী করব আমিই বুঝে নেব। সেটার মালিক আপনি নন’, সাফ কথা ছিল ম্যারাডোনার। দূরত্ব বাড়ে আরও। সেই সাংবাদিককে ম্যারাডোনা যা বলতেন, তার বিরুদ্ধাচরণ করতে বিবৃতি দিতেই হতো নুনেজকে!

ম্যারাডোনা স্বীকার করেছেন, ‘মানসিকতার দিক দিয়েও মাদ্রিদপন্থী ছিলাম, কাতালান নই।’ বেশ বড় বাড়িতে থাকতেন। আর তাঁর সঙ্গে থাকতেন বন্ধুরা, অনেকে। কাতালানরা বলত ‘ম্যারাডোনা ক্ল্যান’। বাংলা তর্জমায় ‘ম্যারাডোনার গুষ্টি’ বললে অর্থটা পরিষ্কার হবে! এই দল বা গোষ্ঠীবদ্ধ ম্যারাডোনাকে নিয়ে কাতালানদের বিরাট সমস্যা ছিল। কেন এতজনকে নিয়ে থাকবেন ম্যারাডোনা, কী দরকার ওদের আশ্রয় দেওয়ার, ওরাই নষ্ট করছে ম্যারাডোনাকে, কোকেনের নেশা ধরিয়েছে – বহুবারই এই লেখাগুলো কাতালান কাগজে লিখিয়েছিলেন নুনেজ। সম্পর্কটা শেষে এমন দাঁড়ায়, যে কোনও মূল্য হেঁকে থেকে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও ম্যারাডোনা ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বলে বেরিয়ে এসেছিলেন কপর্দকশূন্য অবস্থায়, বার্সেলোনা থেকে।

পরে বলেছিলেন, নুনেজের মতো খারাপ মানুষ তিনি দেখেননি। ‘আরে বাবা, লোকটা তো কাতালানও নয়, তবু কী করে এত দিন থেকে গিয়েছিল, বুঝতে পারি না। পরে রোমারিওকে তাড়িয়েছিল, স্টয়চকভকে। এমনকি রিভালদোকেও। কীসের এত ক্ষমতা ওঁর? আমরা মাঠে খেলি বলেই প্রেসিডেন্ট হিসাবে ওঁকে চেনে লোক। আমরা না খেললে কে নুনেজ? ভারী তো একটা কনস্ট্রাকশন সংস্থার মালিক! সে ছড়ি ঘোরাল এত দিন, মেনেও নিল কাতালানরা!’

অবশ্যই এই বক্তব্য পুরোটাই একদিকের। নুনেজের বিরুদ্ধ-বক্তব্য পাওয়া যায়নি খুঁজেও। দরকারই বা কী ‘পলিটিক্যালি কারেক্ট’ থাকার? যেভাবে, যে ভাষায় ম্যারাডোনার আত্মজীবনী বলেছে, আর কী-ই বা বলার থাকতে পারে নুনেজের!

রিভালদো-রোনালদিনহো
রিভালদো সরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন লুইস ফন গালের আমলে, রোনালদিনহোকে চলে যেতে বাধ্য করেছিলেন পেপ গার্দিওলা।

মৌসুম পাঁচেক করে বার্সেলোনায় ছিলেন দুই ব্রাজিলীয়। ১৯৯৭-৯৮ থেকে ২০০১-০২ পর্যন্ত রিভালদো, দুই মৌসুম পর, ২০০৩-০৪ থেকে ২০০৭-০৮ পর্যন্ত রোনালদিনহো। যদিও রিভালদো ইউরোপে সাফল্য এনে দিতে পারেননি, রোনালদিনহোর আমলেই এসেছিল বার্সেলোনার দ্বিতীয় ইউরোপ-সেরার খেতাব, ২০০৬ সালে। বাঁকা বাঁ-পায়ের জাদু ছিল একজনের, অন্যজনের অনাবিল হাসিতে মুগ্ধ ফুটবল বিশ্ব।

ইতিহাস বলছে, ফন গালের সঙ্গে অনেকেরই বনেনি। সেই তালিকায় রিভালদোরও বহু আগে ইয়োহান ক্রুযইফ, গাই থাইস আছেন যেমন, রিভালদোর পরে রবিন ফন পার্সি, মার্কো ফন বমেলরাও আছেন। ক্যাথলিক রিভালদো অবশ্য সেই তিক্ততা ভুলতে পারেননি। বছর তিন আগেও যখন মেসি এবং নেইমারকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ফন গাল, সরাসরি উত্তর দিয়েছিলেন রিভালদো। ভূতপূর্ব কোচ সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন, ‘কোচের আমাকে পছন্দ হয়নি যেমন, আমারও কোচকে পছন্দ হয়নি।’

 

সেরা মন্তব্য অবশ্যই স্টয়চকভের, যাঁকে চলে যেতে হয়েছিল বার্সেলোনা ছেড়ে, ফন গালের জন্যই। তখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দায়িত্বে ফন গাল। স্টয়চকভ বলেছিলেন, ‘একেবারেই সাধারণ মানের কোচ। বার্সেলোনাকে ডুবিয়েছে, এখন ডোবাচ্ছে ম্যানচেস্টারকে (ইউনাইটেড)। ভালদেসের সঙ্গে ওর আচরণ বুঝিয়েছে, খুব খারাপ মানুষ।’ কী করেছিলেন ভালদেসের সঙ্গে? বার্সেলোনা থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন ইউনাইটেডে। তারপর খেলাননি। বলেছিলেন, ওঁর দর্শনের সঙ্গে মেলে না। তা হলে, সই করিয়েছিলেন কেন, সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই দেননি!

গার্দিওলা এসেই রোনালদিনহো আর ডেকো, দুই ব্রাজিলীয়কে বাধ্য করেছিলেন দল ছাড়তে। ডেকো জন্মসূত্রে ব্রাজিলীয়, নাগরিক-সূত্রে পর্তুগালের হয়ে খেলেছিলেন, যা নিয়ে লুইস ফিগোর সঙ্গে রীতিমতো মনোমালিন্যও ছিল। কিন্তু, গার্দিওলার মনে হয়েছিল, তিনি যেভাবে যে-দর্শন মেনে বার্সেলোনাকে খেলাতে চাইছেন, তাতে এই দুই ব্রাজিলীয়র জায়গা নেই। জাভি-ইনিয়েস্তা-মেসি ত্রিভুজকে তুলে আনতে চেয়ে ২০০৮ সালে তুলনায় শ্লথ রোনালদিনহোকে বাধ্য হয়েই এসি মিলানে পাঠাতে হয়েছিল, নিজের দর্শনে প্রথম মৌসুম থেকেই আপোসহীন গার্দিওলাকে। জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ, ইয়াইয়া তোরের কাছে জানতে চাইলে বলে দেবেন, গার্দিওলাকে ঠিক কতটা অপছন্দ তাঁদের। রোনালদিনহোও অবশ্য কখনো তেমন বলেননি। কিন্তু, যেভাবে খেলা থেকে সরে গিয়েছিলেন ততদিনে, গার্দিওলার করারও কি কিছু ছিল?

নেইমারকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়ে হাত কামড়েছে বার্সেলোনা। কুতিনহো চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতায় লিভারপুলকে পাউন্ড খেসারত দিতে বাধ্য হয়েছে। লুইস সুয়ারেজ কাঁদতে কাঁদতে বার্সেলোনা ছেড়ে গিয়ে গত বছরই লা লিগা জিতিয়েছিলেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে। বার্সেলোনার সঙ্গে দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলারদের এই সম্পর্কের ইতিহাস জানা থাকলে মেসিকে ছাড়া নিয়েও এমন একটা নাটক যে হবে না, আশা করবেন কীভাবে?

মেসি এখন
গন্তব্য প্যারিস, সেখানকার পিএসজি ক্লাব, অনেকটা নিশ্চিত এখন। কিন্তু, অপমানিত হয়েই বিচ্ছেদ, সন্দেহ নেই।

মেসি থাকতে চেয়েছেন, ক্লাব রাখতে চাইছে না– এই পরিস্থিতিটা সুকৌশলে তৈরি কাতালান-দুনিয়ার। মেসি ছাড়তে আগ্রহী, ক্লাব ধরে রাখতে চাইছে– ঠিক বিপরীত মেরুতে এই অবস্থান ছিল গত বছর। তাতে পাল্লায় ভারি ছিলেন মেসি। এবার পাল্লা ভারি ক্লাবের। তাই শুনিয়ে রাখা হয়েছে সরকারি বিচ্ছেদ সম্মেলনে যে, ক্লাব যে কোনো ফুটবলারের চেয়ে বড়।

 

যেন কেউ জানত না, কোনো দিন শোনেওনি, তাই বার্সেলোনা সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা করে জানাল এই বিরাট তথ্য যে, ফুটবলারের চেয়ে ক্লাবের স্বার্থ বড় বালাই!

‘মেসিকে রাখা যাচ্ছে না লা লিগার নিয়মের যাঁতাকলে আটকে’ একেবারেই কুযুক্তি। লা লিগা নিয়মটা আজকে তৈরি করেনি। বেশ কিছু বছর ধরেই বার্সেলোনার ক্রমবর্ধমান মাইনে নিয়ে সমস্যা। তারই মধ্যে সই করিয়ে গিয়েছে কুতিনহো-গ্রিজমানদের মতো অনেককেই। তখন কারও মাথায় ঢোকেনি যে, মাইনে নিয়ে এই বাড়াবাড়ি এক সময় ভেঙে ফেলবে ক্লাবের আর্থিক কাঠামো। সাফল্য এমনিতেও আসেনি, আসার কথাও ছিল না। যখন ডিফেন্ডারদের জন্য ইউরো নিয়ে ঘোরার কথা ছিল, আক্রমণভাগের ফুটবলারদের পেছনে অনর্থক ছোটাছুটি করেছিলেন বার্সা-কর্তারা। লা লিগাতে যে দল প্রতি ম্যাচে গড়ে এক গোল হজম করে সেই দল ট্রফি পাবেই বা কী করে?

এখন দেখুন, পিএসজির স্যালারি-ক্যাপ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বার্সেলোনা। পরিষ্কার ভাবনা থেকে যে, যদি পিএসজিতে মেসির সইটা আটকানো যায় কোনো ছুতোয়! আমরা তো ছুড়েই ফেলে দিয়েছি, বড় কোনো ক্লাব যাতে না পায়, নিশ্চিত করতে হবে– এটাই কাতালান মানসিকতা।

আর বলিহারি লা লিগা কর্তৃপক্ষকেও! ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর লা লিগা টেলিভিশন থেকে ফেসবুকে আশ্রয় নিয়েছিল। এবার মেসি চলে যাওয়ার পর লা লিগা আমাদের এই উপমহাদেশে কে দেখবেন গভীর রাতে, জানা নেই! ফরাসি লিগ গত বছর থেকেই টেলিভিশন মারফত পৌঁছে গিয়েছিল উপমহাদেশের বসার ঘরে। এখন মেসিও লিগ ওয়ানে খেললে নিশ্চিত করে দেওয়া হবে সান্ধ্যকালীন সময়, যাতে সহজেই খেলাগুলো দেখা যায়। তরতরিয়ে উঠে আসবে লিগ ওয়ানের টিআরপি। আর, অতলে পৌঁছাবে লা লিগা!

বিদ্রোহী ইউরোপীয় লিগে বার্সেলোনার যোগদান ভালোভাবে নেয়নি লা লিগা কর্তৃপক্ষ, নিশ্চিত। তাই মেসিকে ছুড়ে ফেলতে বার্সেলোনাকে বাধ্য করার যে যুক্তিটা হাওয়ায় ভাসানো হলো কাতালান ক্লাবের তরফে, খানিকটা সত্যি তো বটেই। কিন্তু, এমন করে নিজেদের পায়েই কুড়ালের কোপটা মারল কি না হাভিয়ের তেবাসের লা লিগা কর্তৃপক্ষ, বলবে অদূর ভবিষ্যৎ!

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×