ব্র্যাডম্যানের সবই কি আপনি জানেন?

উৎপল শুভ্র

২৭ আগস্ট ২০২১

ব্র্যাডম্যানের সবই কি আপনি জানেন?

খেলা ছাড়ার দুই বছর পর প্রকাশিত হয়েছে ফেয়ারওয়েল টু ক্রিকেট নামে আত্মজীবনী। জীবনীগ্রন্থ আছে আরও ১১টি। জীবদ্দশাতেই তাঁকে নিয়ে লেখা হয়েছে ১০টি বই এবং ৪টি পুস্তিকা। পত্রপত্রিকা ও সাময়িকীতে প্রকাশিত লেখার তো হিসাবই নেই। এরপর ব্র্যাডম্যানকে নিয়ে অজানা আর কী থাকে! জন্মবার্ষিকীতে তাহলে স্যার ডনকে নিয়ে কী লেখা যায়? দেখি, আপনার অজানা কিছু বের করা যায় কি না!

হয়তো জানেন
টেস্ট ক্রিকেটে ব্র্যাডম্যানের ব্যাটিং গড় ৯৯.৯৪। শেষ ইনিংসে মাত্র ৪ রান করলেই এটি হতো পুরোপুরি ১০০। কিন্তু ইংলিশ লেগ স্পিনার এরিক হলিসের গুগলিতে ব্র্যাডম্যান শূন্য রানে আউট হয়ে যান।

হয়তো জানতেন না
১৯৪৮ সালে ওভালে শেষ টেস্ট খেলতে নামার আগে ব্র্যাডম্যানের ব্যাটিং গড় ছিল ১০১.৩৯। টেস্ট ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ১১২.২৯ পর্যন্ত উচ্চতা ছুঁয়েছিল তাঁর ব্যাটিং গড়, সেটি ১৮তম টেস্ট শেষে।

হয়তো জানেন
টেস্ট ক্যারিয়ারে একবারই ‘ড্রপড’ হয়েছিলেন ব্র্যাডম্যান। ১৯২৮ সালে ব্রিসবেনের এক্সিবিশন গ্রাউন্ডে অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসে ১৮ ও ১ রান করার পর পরের টেস্টে দ্বাদশ ব্যক্তি বানিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে।

হয়তো জানতেন না
এক টেস্ট বাইরে বসে থাকার পরই দলে ফিরে মেলবোর্নে দুই ইনিংসে ৭৯ ও ১১২। এই টেস্টের পর তাঁর ব্যাটিং গড় দাঁড়ায় ৫২.৫০। এরপর আর কখনোই তা ৫০-এর নিচে নামেনি। বাদ পড়ার প্রশ্নও আর ওঠেনি কখনো।

হয়তো জানেন
নার্ভাস নাইনটিজ ব্যাপারটি যেন কী! টেস্ট ক্রিকেটে ৪২ বার ৫০ পেরিয়ে ২৯ বারই সেঞ্চুরি। নব্বইয়ের ঘরে আউট হননি কখনো। নব্বইয়ের ঘরে ‘উইকেট’ দিয়েছেন একবারই—সেটি মৃত্যুকে। ৯২ বছরে শেষ হয়ে গেছে ব্র্যাডম্যানের জীবনের ‘ইনিংস’।

হয়তো জানতেন না
কমপক্ষে ২০ টেস্ট খেলেছেন, এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড় অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম ভোজেসের। সেটি ৬১.৮৭। ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে পার্থক্য ৩৮.০৭, যেটি ব্র্যাডম্যান-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার সেরা ব্যাটসম্যান বলে বিবেচিত ভিক্টর ট্রাম্পারের ব্যাটিং গড়ের (৩৯.০৪) প্রায় সমান!

হয়তো জানেন
৮০টি টেস্ট ইনিংসের ১০টিতে অপরাজিত ছিলেন। যে ৭০ বার আউট হয়েছেন, তার মধ্যে সর্বোচ্চ ২৯ বার আউটফিল্ডে ক্যাচ, ২৩ বার বোল্ড ও ১০ বার কট বিহাইন্ড। এলবিডব্লু  হয়েছেন ৬ বার। টেস্ট ক্রিকেটে কখনো স্টাম্পিংয়ের শিকার হননি। মোট ৬৮ বার আউটের হিসাব পাওয়া গেল। বাকি দুবার?

হয়তো জানতেন না
সেই দুবার রানআউট ও হিট উইকেট। একমাত্র রানআউটটি তৃতীয় টেস্টে নিজের ষষ্ঠ ইনিংসে। সেটিও আবার হোমগ্রাউন্ড অ্যাডিলেড ওভালে। নন-স্ট্রাইকার প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই কভার থেকে জ্যাক হবসের বুলেট গতির থ্রো উইকেটকিপারের গ্লাভসে চলে যায়। যে একবার হিট উইকেট, বোলার কে ছিল, জানেন? ভারতের লালা অমরনাথ!

হয়তো জানেন
ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করা ২৫ ব্যাটসম্যানের একজন ব্র্যাডম্যান (১১৭টি সেঞ্চুরি)। তাঁর আগে সাতজন ব্যাটসম্যান এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন, তাঁর চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি আছে ১৩ জনের।

হয়তো জানতেন না
সেঞ্চুরির সেঞ্চুরিয়ানদের মধ্যে একমাত্র ডন ব্র্যাডম্যানই কখনো ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটে খেলেননি। সবচেয়ে কম ইনিংসে (২৯৫) সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করার রেকর্ডটিও তাঁর। নিকটতম ডেনিস কম্পটনের লেগেছিল ৫৫২ ইনিংস

হয়তো জানেন
টেস্টে দুটি ট্রিপল সেঞ্চুরি করার কীর্তিটি অনেক বছর শুধুই ব্র্যাডম্যানের ছিল। ব্রায়ান লারা, বীরেন্দর শেবাগ ও ক্রিস গেইল এই কীর্তির পুনরাবৃত্তি করেছেন খুব বেশি দিন হয়নি। তবে ১৯৩২ সালে অ্যাডিলেডে ব্র্যাডম্যানকে ২৯৯ রানে দাঁড় করিয়ে রেখে অস্ট্রেলিয়ার শেষ ব্যাটসম্যান আউট হয়ে না গেলে ব্র্যাডম্যান একমেবাদ্বিতীয়ম হয়েই থাকতেন। টেস্টে ২৯৯ নটআউট স্কোরটা শুধুই তাঁর।

হয়তো জানতেন না
ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে ৩৩৮ ইনিংসে ব্র্যাডম্যানের ব্যাটিং গড় ৯৫.১৪। যে ২২১টি ইনিংসে সেঞ্চুরি নেই, তাতে গড় ৫৮.২০। এটি গ্যারি সোবার্স, জিওফ বয়কট, ব্যারি রিচার্ডস, ভিভ রিচার্ডস, ওয়ালি হ্যামন্ড, সিবি ফ্রাই ও ও রণজিৎ সিংজির সেঞ্চুরিসহ পুরো ক্যারিয়ারের ব্যাটিং গড়ের চেয়েও বেশি!

হয়তো জানেন
টেস্টে সর্বোচ্চ ১২টি ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডটি ব্র্যাডম্যানের। ব্যাটিং গড়ের মতো এটিও কোনো দিন ভাঙবে কি না, এ নিয়ে সংশয় আছে। এই রেকর্ডের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ানো কুমার সাঙ্গাকারা যে ১১টি ডাবল সেঞ্চুরি নিয়েই ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন।

হয়তো জানতেন না
সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানের লেগ স্পিন বোলিংয়ে ২টি টেস্ট উইকেটও আছে। দুই শিকারের একজন তাঁর সময়ে ইংল্যান্ডের সেরা ব্যাটসম্যান ওয়ালি হ্যামন্ড। অন্যজন ইভান ব্যারো।

লেগ স্পিন বোলিং টেস্টে ২ উইকেট পেয়েছেন ডন ব্র্যাডম্যান

পরিসংখ্যান নিয়ে কচকচানি অনেক হলো। চাইলে এমন চালিয়ে যাওয়া যাবে আরও অনেকক্ষণ। শেষ করে দেওয়াই ভালো। কী দিয়ে শেষ করি—ব্র্যাডম্যানকে নিয়ে কোনো প্রশস্তিগাথায়? সেটিরও তো কোনো শেষ নেই। নিজের পছন্দের কথা বললে ডেনিস কম্পটন-এর কাছে যাই—
হি ওয়াজ ইউনিক, আ ব্যাটসম্যান অ্যাপিয়ারিং নট জাস্ট ওয়ান্স ইন আ লাইফটাইম, বাট ওয়ান্স ইন দ্য লাইফ অব আ গেম।

শুভ জন্মদিন, স্যার ডন!

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×