স্বাধীনতার ৫০ বছরে খেলার ৫০:৩১

সামাজিক জীবন বদলের অনুঘটক আইসিসি ট্রফি

দুলাল মাহমুদ

৩১ আগস্ট ২০২১

সামাজিক জীবন বদলের অনুঘটক আইসিসি ট্রফি

এর আগে টুকটাক সাফল্য পেলেও পুরো জাতি প্রাণ খুলে হাসার উপলক্ষ তেমন একটা পায়নি। ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি এনে দিয়েছিল সেই সু্যোগই। ক্রিকেট যে এখন পৌঁছে গেছে প্রতি ঘরে ঘরে, তার মূলেও তো ওই টুর্নামেন্টেই। স্বাধীনতার ৫০ বছরে খেলার ৫০-এর ধারাবাহিকের আজকের পর্বে সেই অবিস্মরণীয় টুর্নামেন্ট।

এর আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এত রঙ ছিল না। এত রঙিনও হয়নি কখনো। সেই দিন ক্রিকেটই শুধু রঙদারই হয়নি, পুরো দেশটাই হয়ে ওঠে রঙধনুর মতো বর্ণিল। মনের পাশাপাশি দেহেও লাগে রঙের ছটা। আনন্দে, নৃত্যে, উল্লাসে, উচ্ছ্বাসে চারপাশে ছোটে রঙের ফোয়ারা। যেন অর্গল মুক্তির আনন্দে বাঁধভাঙা ঢেউয়ের মতো বয়ে যায় খুশির জলপ্রপাত। আর ক্রীড়াঙ্গনে এমন উপলক্ষ তো সচরাচর পাওয়া যায় না। তার আগে বিভিন্ন ক্ষেত্রে টুকরো-টাকরা সাফল্য এলেও পুরো জাতির প্রাণ খুলে মাতোয়ারা হওয়ার মতো কীর্তি কখনো হয়নি। প্রথম সেই উপলক্ষ এনে দেয় ক্রিকেট। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আনন্দে হাসে, রঙে ভাসে বাংলাদেশ। বলতে গেলে এটি ছিল ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের সাবালক হওয়ার একটা সূচক। আর তা উদযাপনে কেউ রঙের ফোয়ারায় স্নাত হয়েছেন, কারও কারও চোখে ঝরেছে আনন্দাশ্রু। 

এই শিরোপার জন্য ক্রিকেটানুরাগীদের ছিল অন্তহীন প্রতীক্ষা। জমজমাট ঘরোয়া ক্রিকেট আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে দহরম-মহরম থাকলেও জাতে উঠার পথটা কেন যেন অচেনা রয়ে যায়। কখনো শ্রীলঙ্কা, কখনো জিম্বাবুয়ে, কখনো কেনিয়া, হল্যান্ড কিংবা সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাড়াটে সৈন্যরাও এসে বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে যায়। আশার আলো জ্বলতে জ্বলতে নিভে যায়। তবে হতোদ্যম না হয়ে নতুন করে জ্বালানো হয় আশার প্রদীপ।  

ক্যারিবীয় ক্রিকেটের উজ্জ্বল নক্ষত্র গর্ডন গ্রিনিজকে নির্বাচিত করা হয় পরিত্রাতা হিসেবে। তাঁর অধীনে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে বিকেএসপিতে কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে তালিম দেওয়া হয় ‘যুদ্ধ’ জয়ের। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি। একসময়ের লড়াকু এই ক্রিকেটারের অভিধানে দুর্বলতা বলতে কিছু ছিল না। তাঁর নিবিড় প্রশিক্ষণে ক্রিকেটাররা শারীরিকভাবে ক্লান্ত হয়েছেন। মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছেন। কখনো কখনো বিদ্রোহী হয়ে উঠতে চেয়েছেন। কিন্তু শেষ অব্দি সব কিছু সয়ে নিয়েছেন দেশের বৃহত্তর স্বার্থে। 

গর্ডন গ্রিনিজ ও গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। বাংলাদেশ দলে কোচ-ম্যানেজারের এই জুটিটা ধরে রাখতে চেয়েছিলেন সাবের হোসেন চৌধুরী। ছবি: মোহাম্মদ ইসাম/ক্রিকইনফো।

আগুনে পুড়ে পুড়ে নিখাদ সোনা হয়ে আকরাম খানের নেতৃত্বে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে পাড়ি জমায় বাংলাদেশ দল। চোখে স্বপ্ন আর বুকে সংকল্প নিয়ে গ্রুপ পর্বে এগিয়ে যায় তরতরিয়ে। একে একে আর্জেন্টিনা, পশ্চিম আফ্রিকা, ডেনমার্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়াকে স্রেফ উড়িয়ে দেয়। দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর চেয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ হয়ে উঠে বৃষ্টি। এমনিতেই অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট, বৃষ্টি সেটিকে আরও বেশি অনিশ্চিত করে তোলে। হংকংয়ের সঙ্গে ম্যাচে বাগড়া দেওয়ার আগে সবটাই দ্রুতই সামলে নেওয়া যায়। 

কিন্তু আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে খেলায় বাংলাদেশ যখন ড্রাইভিং সিটে, ঠিক তখন ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নামে। অথচ ১২৯ রানের জবাবটা হেসে খেলেই দিচ্ছিলেন উদ্বোধনী দুই ব্যাটসম্যান আতহার আলী খান আর নাইমুর রহমান দুর্জয়। সাবলীল গতিতে ২৪ রান করার পর নামে জলধারা। বৃষ্টি থামার পর সেদিন টিম ম্যানেজমেন্ট তো বটেই, মাঠে উপস্থিত সাংবাদিক ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা মাঠকে খেলার উপযোগী করার জন্য যা যা করেন, তা হতে পারে দেশাত্মবোধের অমূল্য একটি প্রামাণ্যচিত্র। ভিন দেশের মাটিতে খেলাটা সুসম্পন্ন করার জন্য সবাই যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েন, সত্যিকার অর্থেই তার কোনো তুলনা হয় না। কেউ কেউ মাঠে জমে থাকা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন করার জন্য গায়ের শার্ট খুলে বানিয়েছেন স্পঞ্জ। সবার সর্বাত্মক চেষ্টায় খেলার জন্য প্রস্তুত করা হয় মাঠ। জয়ের জন্য ডাকওয়ার্থ-লুইস মেথডে বাংলাদেশের নতুন টার্গেট দাঁড়ায় ২০ ওভারে ৬৩ রান। জয়ের সুবাস পেতে থাকে বাংলাদেশ। অবশ্য আইরিশদের দেশপ্রেমও তো ঠুনকো নয়। সেই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁরা দাবি করে, মাঠ খেলার অনুপযুক্ত। তিন বল খেলার পর আম্পায়াররা ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে ভাগাভাগি হয়ে যায় পয়েন্ট। বেশ চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। 

সেমিফাইনালে যেতে না পারলে তো বিশ্বকাপ ক্রিকেটে খেলা হবে না। সেটাই ছিল বাংলাদেশের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন। কিন্তু তীরে গিয়ে তরি ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়। 

৪ এপ্রিল কোয়ার্টার ফাইনালে পরিণত হওয়া গ্রুপের শেষ ম্যাচে প্রতিপক্ষ হিসেবে ‘ভালসারবার্গ’ পর্বতের মতো উচ্চতা নিয়ে দাঁড়িয়ে যায় মূলত সমতলভূমি হিসেবে পরিচিত হল্যান্ড। এই দলের সঙ্গে অতীত পরিসংখ্যান মোটেও সুখকর নয়। সেই সঙ্গে ছিল প্রস্তুতি ম্যাচে হারের টাটকা স্মৃতি। তবে আশার কথা, অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে তো প্রতিদিন নতুন সূর্যোদয় হয়। শুরু করতে হয় নতুন করে। সেই আশায় বলীয়ান হয়ে হল্যান্ডকে ১৭১ রানে গুটিয়ে দিয়ে জয়ের প্রহর গুনতে থাকে বাংলাদেশ দল। 

কিন্তু বাংলাদেশ দল ভাবে এক, হয় আর এক। ১৫ রানে ৪ উইকেট পতন ঘটলে অকূল দরিয়ায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। যাহোক, এক পর্যায়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৮.৫ ওভারে ৫৬ রান। এমন পরিস্থিতিতে খামখেয়ালি বৃষ্টি যেন ডুবিয়ে দেওয়ার তালে থাকে। বৃষ্টি হয়ে উঠে কখনও কাঙ্ক্ষিত, কখনও অনাকাঙ্ক্ষিত। সে এক অভিনব দৃশ্যপট। বায়োস্কোপের চিত্রপটের মতো ক্ষণে ক্ষণে বদলে যায়। কখনও বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করা হয়, আবার বৃষ্টি না হওয়ার জন্যও তীব্র আকুলতা প্রকাশ করা হয়। 

ক্রিকেট খেলায় যে কত জট আর কত জটিলতা, সেদিন দেশবাসী পলে পলে উপলব্ধি করেন। রানের হিসাব মেলাতে হিমসিম খেতে হয়। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির এমন লুকোচুরির মধ্যে ডাকওয়ার্থ-লুইস মেথডে বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয় ৩৩ ওভারে ১৪১ রান। অর্থাৎ বাকি ১৪.১ ওভারে করতে হবে ৮৫ রান। ঠিক ৮৫ বলে ৮৫ রান। সেই সময়ে যা মোটেও সহজসাধ্য ছিল না। স্বপ্নের রঙ যেন ফিকে হয়ে যেতে থাকে। 

অনিবার্য পরাজয়ের সামনে দাঁড়িয়ে সেদিন কী ভেবেছিলেন ক্যাপ্টেন আকরাম খান? তাঁর মনে কি উঁকি মেরেছিল ভারতের অধিনায়ক কপিল দেবের কথা? ১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের গ্রুপ পর্বে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ১৭ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার খেলেছিলেন অপরাজিত ১৭৫ রানের অতিমানবীয় এক ইনিংস। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ শোভা পেয়েছিল তাঁর হাতে। তবে কপিলের ছিল একাধিক অপশন। তিনি নেমেছিলেন প্রথম ইনিংসে। তাছাড়া সে ম্যাচে হারলেও সব সম্ভাবনা ফুরিয়ে যেত না। কিন্তু আকরাম খানের কাছে কোনো বিকল্প ছিল না। তাঁকে জিততেই হবে নতুবা বাংলাদেশের ক্রিকেটের কফিন তাঁকে বয়ে নিয়ে যেতে হবে।  

এমন চ্যালেঞ্জের সামনে তিনি কেন, বলতে গেলে কোনও ক্রিকেটারই মুখোমুখি হননি। শুধু শারীরিক সামর্থ্য থাকলেই তো হবে না, দিতে হবে মানসিক সক্ষমতার পরীক্ষা। উইকেটে গিয়ে তাঁর কি তখন মনে পড়েছিল শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা ‘যেতে পারি, কিন্তু কেন যাব?’ যেখানে শুরু করা হয়েছে এভাবে, ‘ভাবছি, ঘুরে দাঁড়ানোই ভালো’। হ্যাঁ, তিনি কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন। ক্রিকেট ইতিহাসে এভাবে কি কেউ ঘুরে দাঁড়িয়েছে? 

তাঁর অপরাজিত ৬৮ রানের ধ্রুপদী, মহাকাব্যিক ও অবিস্মরণীয় ইনিংসে একটি জাতির স্বপ্ন-কল্পনা-ভালোবাসা সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হয়তো এই ইনিংসের তেমন গুরুত্ব নেই, কিন্তু ক্রিকেট বুভুক্ষু একটি জাতির কাছে এর সমতুল্য আর কিছু হতে পারে না। যে ইনিংসের কারণেই উৎসবের আনন্দে মেতে উঠে পুরো দেশ। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত হওয়ার আগেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠেন সব বয়সী মানুষ। তাঁরা সম্ভবত বুঝতে পেরেছিলেন, অপ্রতিরোধ্য এই বাংলাদেশকে রুখে দেওয়া যাবে না। হাড়ি-পাতিল, থালা-বাসনও হয়ে উঠেছিল উৎসবের অনুষঙ্গ। হল্যান্ডের বিপক্ষে এ ম্যাচে ৩ উইকেটে জয়ী হয়ে বাংলাদেশ পা বাড়ায় স্বপ্নের সেমিফাইনালে। 

তবে ক্যালেন্ডারের হিসাবে সবচেয়ে খুশির দিনটি ছিল ৯ এপ্রিল। বৃষ্টি তখনও বাংলাদেশের পিছু ছাড়েনি। আগের দিনের ম্যাচটি পরের দিন গড়ালেও সেমিফাইনালে স্কটল্যান্ডকে হারাতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি। খালেদ মাসুদ পাইলট, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ রফিক, এনামুল হক মনির কৃতিত্বে বাংলাদেশে ৭২ রানে জয়ী হয়। এ ম্যাচে তেমন চ্যালেঞ্জ না থাকলেও এই জয় বাংলাদেশকে নিয়ে যায় স্বপ্ন পূরণের পথে। দীর্ঘ প্রত্যাশার অবসান ঘটিয়ে মেলে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে খেলার ছাড়পত্র।

সুদূর কুয়ালালামপুর থেকে বাংলাদেশ বেতারে জয়ের উচ্ছ্বাস ধ্বনিত হলে উৎসবমুখর হয়ে উঠে বাংলাদেশ। জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন আবালবৃদ্ধবনিতা। রঙে রঙে রঙিন হন ক্রীড়ানুরাগীরা। পথে পথে রঙের ছড়াছড়ি। বাড়াবাড়িও হয়েছে ঢের৷ তবে দেশব্যাপী এমন আনন্দোৎসব কখনো পরিলক্ষিত হয়নি। রাজধানীর পাশাপাশি শহর-নগর-বন্দরে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের জোয়ার। তারপরও জয়ের আনন্দ যেন পুরোপুরিভাবে অনুভূত হচ্ছিল না। একটু যেন অপূর্ণতা রয়ে যায়। 

কেন এই অপূর্ণতা? বাংলাদেশ তখনও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। সবার সেরা হওয়ার আনন্দই অন্যরকম। তার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয় ১২ এপ্রিল পর্যন্ত। ফাইনালে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ কেনিয়া। স্টিভ টিকোলোর ১৪৭ রানের অসাধারণ এক ইনিংসে আফ্রিকান দেশটি ৭ উইকেটে ২৪১ রান তুললে দুশ্চিন্তা খানিকটা ঘুরপাক খেতে থাকে। খাপছাড়া বৃষ্টি এসে যথারীতি সেদিনের খেলাকে নিয়ে যায় পরের দিন। ১৩ এপ্রিল! আনলাকি থার্টিন নাকি লাকি থার্টিন? এমন এক দোটানায় ব্যাট করতে নামলে বাংলাদেশকে অভ্যর্থনা জানায় বৃষ্টি। মনের মধ্যে দোল খেতে থাকে সংশয়ের কালো মেঘ। 

খেলা হবে কি হবে না, এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে ডাকওয়ার্থ-লুইস মেথডে বাংলাদেশের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ২৫ ওভারে ১৬৬ রান। এ ম্যাচের পরতে পরতে জড়িয়ে ছিল রহস্য, রোমাঞ্চ ও রোমান্টিকতা। যদিও এ ম্যাচে জয়-পরাজয়ের তেমন গুরুত্ব না থাকলেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রয়েছে আলাদা গৌরব ও মর্যাদা। আমিনুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ রফিক, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, আকরাম খানরা হাল ধরলেও পথটা সুগম ছিল না। মুহূর্তগুলো ছিল অনিশ্চয়তার ভরা। শেষ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন পড়ে ১১ রান। প্রতিটি বলে গড়িয়ে পড়ে উত্তেজনার লাভা। ওভারের প্রথম বলে খালেদ মাসুদ পাইলট ছক্কা মেরে উত্তেজনার পারদ খানিকটা নামিয়ে আনলেও অপেক্ষায় থাকতে হয় শেষ বল পর্যন্ত। এই ছক্কায় নাকি গলে যায় পাইলটের শ্বশুরের মনও। এমন কীর্তির পর প্রেমিক জামাইকে মেনে নিতে তাঁর আর আপত্তি থাকেনি৷ 

বাংলাদেশের ক্রিকেটের অমর এক ছবি। আইসিসি ট্রফি তুলে ধরেছেন অধিনায়ক আকরাম খান। ছবি: শামসুল হক টেংকু

ইনিংসের শেষ বলে লেগ বাই থেকে জয়সূচক রানটি নেওয়ার জন্য হাসিবুল হোসেন শান্ত পড়িমরি করে যে দৌড় দেন, জীবনে এমন দৌড় দ্বিতীয়বার তিনি দিতে পারতেন না। এরপর থেকেই অনেকটা বদলে যায় বাংলাদেশের সামাজিক জীবনযাপন। যে খেলাটি ছিল আভিজাত্যের উঁচু তারে বাঁধা, তার যেন একরকম সামাজিকীকরণ হয়ে যায়। আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন দলকে যেভাবে সংবর্ধনা দেওয়া হয় এবং পুরস্কারের ডালি সাজিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়, তেমনটা খুব বেশি দেখা যায় না। বাঙালির আবেগ, উচ্ছ্বাস আর ভালোবাসার সবটা দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয় ক্রিকেটারদের।  

আর তখন থেকে বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে সামনে রেখে শুরু হয়ে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অবিরাম ছুটে চলা। তারপর তো একের পর এক সিঁড়ি অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার পালা। বিশ্বকাপে চমকপ্রদ অভিষেক। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশকে স্বাগত জানানো হয় ক্রিকেটের অভিজাত ঘরানায়। এখন তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সর্বত্রই বাংলাদেশের জন্য অবারিত দ্বার। আর সবকিছু সম্ভব হয়েছে আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায়। বাংলাদেশ যত দূরেই যাক না, তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিয়েছে এই ট্রফি। এই টুর্নামেন্টকে বিবেচনা করা যায় বাংলাদেশের ক্রিকেটের ‘আঁতুড়ঘর’ হিসেবে। এই ট্রফি জয়ের পর পুরো দেশকে যেভাবে উদ্বেলিত করেছে, এমন দৃষ্টান্তও খুবই দুর্লভ।

যে আনন্দের কোনো তুলনা নেই। ছবি: শামসুল হক টেংকু

সবচেয়ে বড় কথা, আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাংলাদেশের সামাজিক জীবন আর আগের মতো থাকেনি। ফুটবল প্রভাবিত সমাজ জীবন হয়ে উঠেছে ক্রিকেট কেন্দ্রিক। খুব দ্রুতই খেলাটি সমাদৃত হয় সমাজের সর্বস্তরে। বলতে গেলে ক্রিকেট পৌঁছে যায় ঘরে ঘরে। ড্রয়িং রুম থেকে একদম হেঁশেল অব্দি। চা পানের মতো প্রাত্যহিক জীবন যাপনের অংশ হয়ে উঠেছে এই খেলাটি। ক্রিকেটকে ছাড়া এখন অনেকের কাছেই প্রতিদিনটা কেমন যেন অসম্পূর্ণ মনে হয়। একটি খেলাকে কেন্দ্র করে সামাজিক জীবনের এমন পরিবর্তনের উদাহরণ কি খুব বেশি পাওয়া যাবে?

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×