ব্রায়ান লারার ওয়ানডে-সর্বোচ্চ ১৬৯

শারজায় মরুঝড়

উৎপল শুভ্র

১৬ অক্টোবর ২০২১

শারজায় মরুঝড়

১৬৯ রানের সেই ইনিংস খেলার পথে

টেস্ট আর ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে সর্বোচ্চ স্কোরের রেকর্ড গড়ার কিছুদিনের মধ্যেই ওয়ানডের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটাও প্রায় করেই ফেলেছিলেন ব্রায়ান লারা। ১৬৯ রানে আউট হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত অক্ষতই থাকে তখন ভিভ রিচার্ডসের ১৮৯। লারার ওই ইনিংসটা মাঠে বসে দেখতে পাওয়ায় নিজেকে ভাগ্যবানই মনে হয়। যেটি দেখতে দেখতে মনে হয়েছিল, শারজায় মাঝে মাঝে যেমন ধূলিঝড় ওঠে, এটাও এমনই এক ঝড়। ব্যাটিং-ঝড়!

বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান কে এ নিয়ে এখন যেমন খুব একটা তর্ক হয় না, হয়তো রমেশ টেন্ডুলকারকে, তখন প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা এত একপেশে না থাকলেও ব্রায়ান চার্লস লারাকে 'সেরা' মনে করা লোকের সংখ্যাই ছিল বেশি। 'তখন' বলতে ১৯৯৪-৯৫ সময়টা, যখন প্রশংসাবাণী বিলানোর উদারতার জন্য একটুও দুর্নাম নেই যাঁর, সেই জিওফ বয়কট বলছেন, তার জীবনে যে তিনজন ব্যাটিং জিনিয়াস দেখেছেন তাঁদের নাম গ্যারি সোবার্স, ভিভিয়ান রিচার্ডস ও ব্রায়ান লারা। খুব বড় প্রশংসা। কিন্তু তখন এটিও চমকে ওঠার মতো কোনো ব্যাপার নয়। এটি সেই সময় যখন সোবার্স-রিচার্ডসও লারাকে তাঁদের উত্তরসূরি বলতে গর্ব অনুভব করেন, যখন এই বাঁহাতি জিনিয়াসের প্রশংসার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন সব রথী-মহারথীরা। উপায়ও ছিল না তাঁদের। প্রশংসা করতে গিয়ে বিশেষণের সংকটে পড়ে যাওয়ার মতোই খেলছিলেন 'প্রিন্স অব ত্রিনিদাদ'।

মাস দেড়েকের মধ্যে টেস্ট এবং ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের দুটি রেকর্ডই ভেঙে দেওয়ার পর 'প্রিন্স'কে 'কিং' বলে ডাকতে শুরু করেছেন অনেকে। সাফল্য, খ্যাতি, অর্থ-সব বিচারেই ব্রায়ান লারা তখন বাকি যে কারও চাইতে অনেকটা এগিয়ে থেকে এক নম্বর। শারজায় চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে আসার সময়ও তা-ই। রেসে ছিলেন মূলত তিনজন, বাকি দুই সুপারস্টার শচীন টেন্ডুলকার আর শেন ওয়ার্নও জ্বলছিলেন উজ্জ্বল হয়েই। তারপরও লারাকে এক নম্বরে রাখতে আগ্রহী লোকের সংখ্যাই ছিল বেশি। সেবার শারজায় তিন দলের একটি শারজার চিরন্তন দর্শকপ্রিয় পাকিস্তান, তারপরও দেখা গেল লারাই তুলছেন সবচেয়ে বড় আলোড়ন। বিনিময়ে লারারও কিছু দেওয়ার ছিল। অসাধারণ এক ইনিংস খেলে দিলেন তাঁর প্রতিদান।

সেই ইনিংস শেষে দর্শকদের আক্ষেপই অবশ্য বেশি শোনা গেল। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকার সুযোগ হারানোর আক্ষেপ! টেস্ট আর ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রানের দুটি রেকর্ডই নিজের করে নেওয়ার পর এমন আর একটি রেকর্ডই বাকি থাকে। তখন যেভাবে ব্যাট করছেন লারা, তাতে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটিও তাঁর হয়ে যাওয়াটা মনে হচ্ছে শুধুই সময়ের ব্যাপার। সেই অপেক্ষা যে শারজাতেই শেষ হচ্ছে, সে ব্যাপারে প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন সবাই। লারার সেঞ্চুরির পরই জেগে ওঠা সম্ভাবনাটা ক্রমেই জোরালো হতে হতে টিকে ছিল আরও ৬৯ রান পর্যন্ত। তারপরই লারার মতো দর্শকদেরও ছুঁয়ে গেল আশাভঙ্গের বেদনা। চারপাশ ক্রমশই আরো উজ্জ্বল করে তুলতে থাকা প্রদীপ-শিখাটি এক ফুৎকারে নিভিয়ে দেওয়া হঠাৎ ঝড়ো হাওয়ার মতো কুমারা ধর্মসেনার বল যখন ভেঙে দিল লারার স্টাম্প, তখনো ইনিংসের ৩৩টি বল বাকি। সেটি ১৯৯৫-এর অক্টোবর, সাঈদ আনোয়ারের ১৯৪ করতে তখনো বছর দেড়েক বাকি, ভিভ রিচার্ডসের ১৮৯ রানই ওয়ানডেতে সব ব্যাটসম্যানের আরাধ্য স্বপ্ন। লারা আউট হলেন ১৬৯ রানে অর্থাৎ ভিভের রেকর্ড থেকে ২০ রান দূরে থাকতে। যেভাবে ব্যাট করছিলেন, তাতে ইনিংসের বাকি ৩৩ বলের যে কটিই তাঁর ভাগে পড়ুক না কেন, তা থেকে লারা রেকর্ড ভেঙে দিতে প্রয়োজনীয় ২১ রান তুলতে পারতেন কি না–কেউ এই প্রশ্ন তুললে তাঁর মানসিক সুস্থতা সম্পর্কে সন্দেহ জাগত।

প্রশ্ন-টশ্ন তোলার লোক অবশ্য শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সেদিন খুব বেশি ছিল না। শারজার ক্রিকেট মানেই মানে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ। জীবিকার জন্য উদয়াস্ত পরিশ্রম করা উপমহাদেশের অভিবাসীরাই শারজার ক্রিকেটের দর্শক, ক্রিকেট-প্রেমের চেয়ে ফেলে আসা দেশের সঙ্গে নাড়ির টান অনুভব করতেই যেন তাঁদের মাঠে আসা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ দেখার কোনো আগ্রহই নেই। তাতে ব্রায়ান লারা নামে একজন থাকলেই বা কী! এ কারণেই অমন মহাকাব্যিক একটি ইনিংস খেলে ব্রায়ান লারা যখন প্যাভিলিয়নে ফিরছেন, করতালির সবচেয়ে জোরালো শব্দটা হলো প্রেসবক্স থেকেই। সকালে অবস্থাটা ছিল আরও করুণ। প্রমোদ্য বিক্রমাসিংহে যখন প্রথম বলটি করার জন্য দৌড় শুরু করলেন, শূন্য গ্যালারি দেখে বিস্মিত হয়ে নিজেই গুনে দেখেছি, মাত্র ৫৭ জন দর্শক। মাত্র ৮০ বলে সেঞ্চুরি করার পর লারা যখন ব্যাট তুললেন, তখনো তা এক শ হয়নি। এই শ খানেক দর্শক নিশ্চয়ই তাঁদের মাঠে আসার সিদ্ধান্তকে বাহবা জানিয়ে নিজেরাই নিজেদের পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন। বাকি জীবন গল্প করার মতো একটি ইনিংস যে দেখা হয়ে গেছে তাদের! পরে যোগ হয়েছে গল্প করার মতো একটি ম্যাচও।

কুমারা ধর্মসেনার বলে লারা বোল্ড হয়ে যাওয়ায় তাঁর চেয়েও যেন বেশি হতাশ হয়েছিলেন দর্শক। ইতিহাসের প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ার সুযোগটা যে মিলিয়ে গেল এতে

লারার ব্যাটিংয়ে যত মাদকতাই থাক, প্রতিপক্ষ দলে থাকলে তো আর তা উপভোগ করা যায় না। লারার যথেচ্ছ স্ট্রোক প্লেতে শ্রীলঙ্কান খেলোয়াড়দেরও তাই একটুও আনন্দ পাওয়ার কথা নয়, তাঁরা পেয়েছেন শুধু যন্ত্রণাই। রুমেশ কালুভিতারানার যন্ত্রণাটা তার মধ্যেও একটু অন্যরকম। লারা একেকটি বাউন্ডারি মেরেছেন, আর আরও একটু বিবর্ণ হয়েছে তাঁর মুখ। লারার নামের পাশে রান যখন মাত্র ১০, কালুভিতারানা ফেলে দিয়েছিলেন তাঁর দেওয়া ক্যাচ। মন খারাপ তো হবেই, কালুভিতারানারও হয়েছিল. কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে সেই মন খারাপটা যে এমন রূপ নেবে, তা কিভাবে কল্পনা করবেন এই উইকেটকিপার! এই একটি ভুলের মূল্য ১৫৯ রান, এটি কীভাবেই বা ভাববেন 'কালু'!

পঞ্চম বলেই এক ওপেনার স্টুয়ার্ট উইলিয়ামস আউট, তাই প্রথম ওভারেই নামতে হয়েছিল তিন নম্বরে খেলা লারাকে। পরের ওভারে মিডিয়াম পেসার চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে কাভার ড্রাইভ করে প্রথম বাউন্ডারি। মাঝখানে এক বল, এরপর আবার চার, এবার বল ছুটল মিড উইকেটে। ৪৭ বলে এল লারার হাফ সেঞ্চুরি, যাতে ৯টি চার, ১টি ছয়। হাফ সেঞ্চুরির পর আরও অসহায় দেখাতে লাগল শ্রীলঙ্কান বোলারদের। লারার ব্যাটে তখন আর মেঘের কোনো ছায়া নেই, সেখানে শুধুই রোদ। বোলিং ছিন্নভিন্ন করে দেওয়ার কোনো আক্রোশ নেই তাঁর ব্যাটে, বরং মাঠের প্রতিটি ঘাসে বলের স্পর্শ লাগাবেন–যেন নেমেছেন এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে, তাঁর ব্যাটে ক্রিকেট বুকের সব শটের প্রদর্শনী তো হচ্ছেই, এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে নিজস্ব উদ্ভাবন, বল ছুটে যাচ্ছে মাঠের প্রতিটি কোণে। যে পথে ৫০ থেকে ১০০-তে পৌছুলেন, তা জানিয়ে দিল তাঁর বড় ইনিংস খেলার ইচ্ছেটাও। বল ৪৩টির বেশি লাগেনি, তবে ঝড়টা পরে তুলবেন, এটি ঠিক করে রাখার প্রমাণ হয়ে তাতে মাত্র একটি চার, একটাও ছয় নেই।

শারজায় মাঝে মাঝে ধূলিঝড় ওঠে, সেই ঝড়কেও ছাড়িয়ে গেল লারার ব্যাটে ওঠা ঝড়ের তীব্রতা। সেই ঝড়ে খড়কুটো হয়ে উড়ে গেলেন ভাস-বিক্রমাসিংহে-মুরালিধরন-ধর্মসেনারা। তাঁদের কোনো বোলার বলেই মনে হচ্ছে না তখন।

৩২তম ওভারে ওয়ানডেতে তাঁর ষষ্ঠ সেঞ্চুরিটি (তখন টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরির সংখ্যা মাত্র ৪) পেয়ে যাওয়ার পরই শুরু হলো সেই ঝড়। শারজায় মাঝে মাঝে ধূলিঝড় ওঠে, সেই ঝড়কেও ছাড়িয়ে গেল লারার ব্যাটে ওঠা ঝড়ের তীব্রতা। সেই ঝড়ে খড়কুটো হয়ে উড়ে গেলেন ভাস-বিক্রমাসিংহে-মুরালিধরন-ধর্মসেনারা। তাঁদের কোনো বোলার বলেই মনে হচ্ছে না তখন, যে বলটিতে লারা কাভার ড্রাইভ করছেন, মনে হচ্ছে, চাইলেই তাতে স্কয়ার ড্রাইভও করতে পারতেন। যে বলটিতে চার মারছেন, মনে হচ্ছে তাতে ছয় মারার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হতেন না। সেঞ্চুরির পর ইনিংসের তৃতীয় ফিফটি করতে লাগল মাত্র ২১ বল, এর ৪টিতে চার মেরেছেন, ৩টিতে মেরেছেন ছয়, এর দুটি অরবিন্দ ডি সিলভার পর পর দুই বলে। লারার ইনিংসের এই সময়টার কথা মনে হলেই আমার চোখে ভেসে ওঠে কাঁচাপাকা চুল আর পুরো সাদা হয়ে যাওয়া গোঁফের একটি মুখ। মোহাম্মদ আলী জাফরি। ক্রিকেটারদের পোশাকে, ক্যাপে, কারো কারো ব্যাটেও যে AJ লোগো দেখতে পান, শারজায় 'AJ Sports' নামে খেলাধুলা সামগ্রীর বিখ্যাত সেই দোকানটি এই জাফরি সাহেবদেরই। শারজার ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন তারা তিন ভাই-ই। মোহাম্মদ আলী জাফরি কাজ করেন সিবিএফএস'র স্কোরার হিসেবে। পেশা নয়, নেশা। সেই নেশাটাকেই লারার ইনিংসের ওই সময়টায় জীবনে প্রথমবারের মতো পরিত্যাজ্য বলে মনে হতে লাগল তাঁর। ড্রিংকসের বিরতির কারণে লারার ব্যাটে স্ট্রোকের ফুলঝুরিতেও যখন ক্ষণিক বিরতি, সদাহাস্যময় লোকটি মুখ কালো করে বললেন, 'কেন যে স্কোরার হয়েছিলাম! এমন ব্যাটিংয়ের সময় কি খাতায় কলম গুঁতাতে ইচ্ছে করে? ইচ্ছে করছে সব কিছু ভুলে গিয়ে প্রাণভরে লারার ব্যাটিং দেখি।'

লারার ব্যাটে রানের গতির সঙ্গে পাল্লা দেওয়াটা যে তখন পর্যন্ত তার স্কোরার জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেটিও জানিয়েছিলেন জাফরি। ম্যাচ শেষে স্কোরবুক থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসটি ফটোকপি করে উপহার দিয়েছিলেন, এটির দিকে তাকালে লারার খেলা ১২৯ বল আর ১৬৯ রানের খুঁটিনাটি তো অবশ্যই, সঙ্গে লারার ব্যাটিং দেখে জাফরির হতবিহ্বল মুখটিও ভেসে ওঠে চোখের সামনে।

বল আর রানের হিসাবটা ভুল পড়েননি। শেষ পর্যন্ত ১২৯ বলেই ১৬৯ করেছেন লারা। তৃতীয় ফিফটি করতে লেগেছে মাত্র ২১ বল। আর সব মিলিয়ে সেঞ্চুরির পর ৬৯ রান করতে ৩৯। এই ৩৯ বলের মধ্যে তাঁকে বোল্ড করে দেওয়া কুমারা ধর্মসেনার আপাত নিরীহদর্শন বলটি ছাড়া আর মাত্র ৪টি বলেই কোনো রান করতে পারেননি। যেভাবে ব্যাট করেছেন, তাতে এই চার বলে রান করতে না পারাটাই ছিল বিস্ময়, নাকি ৩৪টি বলেই রান করাটা নয়।

লারার ১৬৯ রানের ইনিংসটিই যথেষ্ট ছিল ওই ম্যাচটিকে স্মরণীয় করে রাখতে। পরে কারণ যোগ হয়েছে আরও। সেই টুর্নামেন্টেই বিশ্বকাপ জয়ের রিহার্সালটা দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা এবং এই ম্যাচটিতেই প্রথম তাদের সত্যিকার ওয়ানডে সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়ে চমকে দিয়েছিল ক্রিকেট বিশ্বকে। লারার ওই মহাকাব্যিক ইনিংসটির কল্যাণে ৫০ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭ উইকেটে ৩৩৩ করে ফেলার পর প্রতিপক্ষের হারারই কথা, শ্রীলঙ্কাও হেরেছিল, তবে মাত্র ৪ রানে। তাও শেষ বলে সে ম্যাচে সেঞ্চুরি করা আরেক বাঁহাতি হাশান তিলকরত্নের করা পুলটি সোজা বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়ানো স্টুয়ার্ট উইলিয়ামসের হাতে চলে না গেলে অমন একটি ইনিংস খেলার পরও পরাজিত দলে থাকতে হতো ব্রায়ান লারাকে। অন্যায়ই হতো সেটি, হতো ব্যতিক্রমীও। লারা এরচেয়ে ছোট সেঞ্চুরি করলেও তো সাধারণত হারে না তার দল। তাঁর ব্যাটিংয়ের যে ধরন, যেভাবে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তোলে তাঁর ব্যাট, তাতে তার সেঞ্চুরির পর দলের হারাটা আসলেই খুব কঠিন।

(লেখকের 'সেই সব ইনিংস' বই থেকে)

সংযোজন
এই ইনিংস খেলার দুদিন পর অনেক সাধনায় পাওয়া ব্রায়ান লারার ইন্টারভিউয়ে অবধারিতভাবেই এসেছিল ১৬৯ রানের ওই ইনিংস এবং রেকর্ড ভাঙতে না পারার প্রসঙ্গ। ওই অংশটুকু তুলে দিয়েই না হোক লেখাটা।

উৎপল শুভ্র: টেস্ট ও ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডের পর বাকি শুধু ওয়ানডের রেকর্ডটা। দুদিন আগে সেটিও তাে প্রায় হয়েই গিয়েছিল (শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৬৯ রান করেছিলেন)। ওয়ানডের বিশ্ব রেকর্ড থেকে মাত্র ২০ রান দূরে আউট হয়ে যাওয়ায় নিশ্চয়ই খুব হতাশ হয়েছিলেন।

লারা: ওয়ানডে ক্রিকেটে সবকিছু এত তাড়াতাড়ি ঘটে যায়, তাৎক্ষণিকভাবে তেমন ভাবারও সুযােগ থাকে না। ওই ইনিংসটfর কথা উঠলেই সবাই বলবে, আহা রে, মাত্র ২০ রানের জন্য বিশ্ব রেকর্ডটা হয়নি। তবে ওটা করার জন্য আমার হাতে সারা দিন পড়ে ছিল না, ছিল মাত্র চার-পাঁচ ওভার। আবারও আমি ওই কথাটাই বলব, আমার ব্যাটিংয়ে দলের কতটা লাভ হলো, সেটাই বড় কথা। আমি ব্যাট করতে নামি আমার দলের জন্য। আমি যত বেশি রান করব, দলের ততই লাভ–ব্যাটিং করতে নামার সময় শুধু এটাই মাথায় থাকে আমার। বিশ্ব রেকর্ড কিছু নয়। আমি ওদিন আরও রান পেলে অবশ্যই ভালাে হতাে। দুর্ভাগ্য যে, আউট হয়ে গেছি! নইলে ১৮৯, ১৯০ অথবা কে জানে, ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনালে হয়তাে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিও করে ফেলতে পারতাম। তবে দিনশেষে সবচেয়ে যা গুরুত্বপূর্ণ, তা হলাে আমরা ৪ রানে জিতেছি। আমি এতেই খুশি।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×