শনিবার,
১২ অক্টোবর ২০২৪
এর আগে ৫০ ওভার ও ২০ ওভারের চার-চারটি বিশ্বকাপ ফাইনালে ঘুরেফিরে সেই একই গল্প। কী আশ্চর্য, এর দুটিতে জয়াবর্ধনে অধিনায়ক, দুটিতে সাঙ্গাকারা। কাল অশ্বিনকে ছক্কা মেরে থিসারা পেরেরা ম্যাচ শেষ করে দেওয়ার পরই পুরো শ্রীলঙ্কা দল ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড় লাগাল মাঠের দিকে। জয়াবর্ধনের ছোটখাটো শরীরটা যেন হাওয়ায় উড়ছে! সেটি শুধুই বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে নয়। তাতে মিশে থাকল শাপমোচনের স্বস্তি।
বাস্তব কোনো কারণ না খুঁজে পেলে মানুষ অতিপ্রাকৃত কিছুর সন্ধান করে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যাখ্যা করতেও তেমন কিছুরই আশ্রয় নিতে হচ্ছে। গল্পে-পুরাণে অভিশাপে রাজকুমার পাথরের মূর্তি হয়ে যায়। গাছে পরিণত হয় জলজ্যান্ত মানুষ। ক্রিকেটের দক্ষিণ আফ্রিকাকেও কি তাহলে তাড়া করছে তেমন কোনো অভিশাপ! তোরা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠবি, কিন্তু ফাইনালের দেখা পাবি না!
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৮৪ রানের জয় টেস্ট ম্যাচের আড়াই দিন বাকি থাকতে ইনিংসে জেতার মতো। অথচ কী আশ্চর্য, পাকিস্তানকে টি-টোয়েন্টিতে তাদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ৮২ রানে শেষ করে দেওয়ার পরও মাঠে কোনো গ্যাংনাম হলো না!আশ্চর্য, আবার একদমই আশ্চর্য নয়। অনেক আগেই নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়া ম্যাচ জেতার পর কি আর গ্যাংনাম আসে নাকি!
রসিকতা করে অনেকে আজকের ম্যাচটাকে ‘ফাইনাল’ বলছে। মুখোমুখি হচ্ছে সুপার টেনে জয়ের দেখা না পাওয়া দুই দল। ‘ফাইনাল’-ই তো! তবে পার্থক্য হলো, এটি শিরোপা-নির্ধারণী নয়। কোন দল শূন্য হাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ করবে—এই ‘মহাগুরুত্বপূর্ণ’ প্রশ্নটারই শুধু মীমাংসা হবে এতে।
একটি পরাজয়ের ধাক্কা সামলানোর আগেই যে আবার আরেকটি ম্যাচ এসে হাজির হচ্ছে। অধিনায়ককে দলবল নিয়ে আবারও নামতে হচ্ছে ‘যুদ্ধে’। গলায় পরাজয়ের মালাটা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। সেই মালায় ফুলের বদলে শুধুই কাঁটা! কে জানত, দেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টির এই মহাযজ্ঞ আনন্দের বদলে উল্টো এমন ‘যন্ত্রণা’ হয়ে যাবে!
ধোনি শূন্য রান করলেও ভারত হেসেখেলে জেতে। তারপরও নয় বল বাকি থাকতে জিয়াউরকে ছক্কা মেরে যেভাবে ম্যাচটা শেষ করে দিলেন, সেটির একটা প্রতীকী অর্থ দাঁড়িয়ে গেল। শুধু ম্যাচই জেতাল না, এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনালেও তুলে দিল ভারতকে। আর প্রাথমিক পর্বে দুই জয়ের পর বাংলাদেশের হয়ে গেল হারের হ্যাটট্রিক।
যেকোনো ম্যাচেই ফলাফল নিয়ে সংশয় দূর হয়ে যাওয়ার পর যে খেলাটা হয়, সেটির মতো অর্থহীন কিছু আর হয় না। কাল মিরপুরে ম্যাচের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি সেই অর্থহীন খেলাই দেখতে হলো দর্শকদের। হংকংয়ের কাছে হেরে প্রাথমিক পর্ব যেখানে শেষ করেছিল বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে `সুপার টেন`-ও শুরু যেন সেখান থেকেই।
আজ পাকিস্তান বা শহীদ আফ্রিদির প্রতিপক্ষ তো যত না ভারত, তার চেয়ে বেশি ওই ‘বিশ্বকাপ’ কথাটা! ক্রিকেটের অমীমাংসিত এক চরম রহস্য লুকিয়ে রেখেছে ওই ‘বিশ্বকাপ’। বিশ্বকাপ, তা সেটি ৫০ ওভারের হোক বা ২০ ওভারের, পাকিস্তানের কাছে কীভাবে যেন অজেয় হয়ে যায় ভারত!
কাগজে-কলমে প্রতিপক্ষের নাম আফগানিস্তান ছিল বটে, আসল প্রতিপক্ষ তো ছিল ‘চাপ’। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের আসল সময়ে দর্শক হয়ে যাওয়ার শঙ্কা। সেই চাপ, সেই শঙ্কাকে বাংলাদেশ যেভাবে উড়িয়ে দিল, সেটির প্রতীকী প্রকাশও এনামুলের ওই ছক্কায়।
১২ অক্টোবর