খেলা নিয়ে খেলার বাইরে

ধোনি যখন `প্রতিবেশী`!

উৎপল শুভ্র

১৪ জুলাই ২০২১

ধোনি যখন `প্রতিবেশী`!

মহেন্দ্র সিং ধোনি

সামনে ধোনি, পেছনে আমি। কয়েক ধাপ এগোনোর পর ধোনি হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন, `আর ইউ ফলোয়িং মি?` ধোনির মুখে মৃদু হাসির রেখা দেখে আমিও একটু হাসলাম, `ইউ আর ওয়ার্থ ফলোয়িং। তবে আমি তোমাকে ফলো করছি না। আমি এই হোটেলেই উঠেছি।`

মহেন্দ্র সিং ধোনি চার দিন আমার প্রতিবেশী ছিলেন। সকাল-বিকাল-রাতে দেখা হতো, এমন প্রতিবেশী। কী, বিশ্বাস হচ্ছে না? 

না, না, এটা 'বিশ্বাসে মিলায় বস্তু' জাতীয় ব্যাপার নয়, ঘটনা আসলেই সত্যি। ধোনির সঙ্গে আমার এই সহাবস্থান ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময়। সেই বিশ্বকাপ হয়েছিল ইংল্যান্ডে। বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ভারতের সঙ্গে, নটিংহ্যামে। দুই দলই উঠেছে পার্ক প্লাজা হোটেলে। আমিও তাই। চেক ইন করার পর একটু ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরুতেই উল্টো দিকের রুমের ভেতরে চোখ চলে গেল, কারণ দরজাটা আধখোলা। ভেতরে দেখি উনি, মানে মহেন্দ্র সিং ধোনি! 

লন্ডনে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে ভারতীয় দলও সেদিনই নটিংহ্যাম পৌঁছেছে। করিডোরে যুবরাজ-শেবাগ-হরভজন-জহির খানদের মতো আরও কয়েকজনকে দেখে অনুমান করলাম, গ্রাউন্ড ফ্লোরের এই পাশটার বাকি সব রুমেই ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার। কীভাবে কীভাবে যেন আমি এর মধ্যে ঢুকে গেছি।

ধোনির রুমের দরজা বেশির ভাগ সময় আধখোলাই দেখতাম। দলের অন্য ক্রিকেটারদের আসা-যাওয়াও লেগেই থাকত। সবার জন্য অধিনায়কের দ্বার অবারিত বলতে যা বোঝায় আর কি! সন্ধ্যার পর আড্ডাও ছিল মোটামুটি নিয়মিত। আগের মৌসুমে আইপিএল খেলার সুবাদে ভারতীয়দের সঙ্গে চেনাজানার সূত্রে মোহাম্মদ আশরাফুলও একাধিকবার যাতে যোগ দিয়েছেন। তখন তিনি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। 

দরজা খোলা থাকায় না চাইলেও ধোনির রুমের ভেতরে চোখ পড়ে যেত। ভদ্রতার সীমা লঙ্ঘন না করে যতটুকু দেখা যায়, তাতেই পালাক্রমে ধোনিদের শিশা টানার দৃশ্যও দৃষ্টি এড়াত না।

মজাটা হলো বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের আগের দিন। ট্রেন্ট ব্রিজ মাঠে মহা আলোচিত এক কাণ্ড ঘটিয়ে এসেছেন ধোনি। অভূতপূর্বও বটে। সংবাদমাধ্যমে শেবাগের সঙ্গে তাঁর কথিত ঝামেলার খবরে ক্ষুব্ধ হয়ে পুরো দল নিয়ে হাজির হয়েছেন প্রেস কনফারেন্সে। কোচিং স্টাফও বাদ যায়নি। মঞ্চে চেয়ার ছিল তিনটি। এর একটিতে ধোনি বসলেন, আরেকটিতে কোচ গ্যারি কারস্টেন। বাকি সবাই পেছনে দাঁড়িয়ে। কোনো প্রশ্নোত্তর পর্বের ধার না ধেরে লিখিত একটা বিবৃতি পাঠ করেই ধোনি দলবল নিয়ে বেরিয়ে গেলেন প্রেস কনফারেন্স রুম থেকে। সে এক দেখার মতো দৃশ্য! অবাক সেই প্রেস কনফারেন্সের গল্প নিয়ে ওয়েবসাইটেই একটা স্টোরি আছে (পুরো দল নিয়ে ধোনির সেই প্রেস কনফারেন্স)।  

সেই প্রেস কনফারেন্স শেষে দুই দলের প্র্যাকটিস দেখে-টেখে মাঠে বসেই মনে হয় যা লেখার লিখেছিলাম। সন্ধ্যা-সন্ধ্যা বিকেলের দিকে মাঠ থেকে হোটেলে ফিরেছি। আমার রুম হোটেলের নিচতলায়। লবি থেকে একটু এগিয়ে গেলেই বাঁয়ে লম্বা একটা প্যাসেজ। দুপাশে সব রুম। সেই প্যাসেজে ঢুকতেই দেখি, সামনেই ধোনি। তিনিও নিজের রুমের দিকেই যাচ্ছেন। পেছনে পায়ের শব্দ শুনে একবার ফিরে তাকালেন। নাম না জানলেও এতবার দেখেছেন যে, চেহারায় তো চেনেনই।  আরও কয়েক ধাপ এগোনোর পর হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন, 'আর ইউ ফলোয়িং মি?'

ধোনির মুখে মৃদু হাসির রেখা দেখে আমিও একটু হাসলাম, 'ইউ আর ওয়ার্থ ফলোয়িং।  তবে আমি তোমাকে ফলো করছি না। আমি এই হোটেলেই উঠেছি। তোমার উল্টোদিকের রুমটাই আমার।'

'ইজ ইট?' বলে ধোনি চোখ টিপলেন, 'তাহলে তো আমাকে সাবধান থাকতে হবে।'

নিছকই দুষ্টুমি। উল্টোদিকের রুমে সাংবাদিক বলেই সাবধান থাকতে হবে? অন্য কেউ হলে তা-ও কথা ছিল, ধোনি কাউকে/কোনো কিছুকে কেয়ার করেন নাকি! এরপরও তাঁর রুমের দরজা অমন আধখোলাই দেখেছি। তবে বহিরাগত অতিথিকে আপ্যায়ন করতে কখনো কখনো যে তা বন্ধ হয়নি, তা নয়। তেমন দু'একজন অতিথিকে দেখেই বুঝেছি, আর যা-ই হোক, তারা ধোনির সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করতে আসেননি। 

থাক, সেই গল্প অকথিতই থাকুক। কিছু জিনিস গোপন থাকাই ভালো।

আরও পড়ুন:

ধোনিবাদের বিশ্বজয়

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×