দ্য প্যাভিলিয়ন ও একটি সেলফির গল্প

উৎপল শুভ্র

১৬ জুলাই ২০২১

দ্য প্যাভিলিয়ন ও একটি সেলফির গল্প

ছবিটা দেখলেই মন চলে যায় ধর্মশালায়। বাংলাদেশকে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে খেলতে হয়েছিল বলেই না দেখা হয়েছে এই শৈলশহর। ছবিটা দেখলে ওই দুপুরটার কথাও মনে পড়ে। বাংলাদেশের টিম হোটেল `দ্য প্যাভিলিয়ন` এবং মাশরাফি-তামিম-সাকিবদের সঙ্গে তুমুল আড্ডার এক দুপুর।

বাহ্, হোটেলের নামটা তো দারুণ! 

দ্য প্যাভিলিয়ন। 

শুনলেই মনে হয়, ক্রিকেটের সঙ্গে কোনো যোগ আছে। একটু খোঁজ করে জানলাম, যোগটা খুব জোরালো। ধর্মশালায় আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের পূর্বশর্ত পূরণ করতেই জন্ম এই হোটেলের। জনক হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন। সরকারের কাছ থেকে জমি নিয়ে তারা নিজেরাই তা বানিয়ে নিয়েছে। ইন্টারনেটে দেখলাম, সেই হোটেলটা এঁকেবেঁকে ওপরে উঠে যাওয়া পাহাড়ি রাস্তার মাথায়।  না, এই হোটেলে থাকতেই হবে। তার ওপর বাংলাদেশ দলও যখন এখানেই থাকছে। 

গল্পটা ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের। চূড়ান্ত পর্বে খেলতে প্রাথমিক পর্বের বাধা পেরোতে হবে বাংলাদেশকে। ধর্মশালায় সেই অংশটুকুর পুরোটা সময়ই প্যাভিলিয়নে বাংলাদেশ দল। স্টেডিয়ামে ঢুকেও প্যাভিলিয়ন, এর আগে-পরেও প্যাভিলিয়ন । মানে 'দ্য প্যাভিলিয়ন' হোটেল আর কি! 

অনেক চেষ্টা করেও আমার কিন্তু আর প্যাভিলিয়নে থাকা হয়নি।। ১২টি স্যুইট রুমসহ মোট রুম মাত্র ৯৮টি। প্রাথমিক পর্বের চার দল, আম্পায়ার, ম্যাচ রেফারি এদেরই যে জায়গা হয় না! মনটা খুবই খারাপ হলো। আরও খারাপ হলো খেলার শুরুর দুদিন পর স্বচক্ষে হোটেলটি দেখে। এত সুন্দর ভিউ! রেস্টুরেন্টের পাশে একটা খোলা চাতাল, সেখানে বসেই সারা দিন কাটিয়ে দেওয়া যায়। এই সেলফিটাও সেখানেই তোলা। 'সেলফি' মানে তো নিজের ছবি নিজে তোলা, তাই না? সেই হিসাবে এটা মাশরাফির সেলফি, আমার মোবাইলে বাংলাদেশ অধিনায়ক যা তুলে দিয়েছিলেন। সেলফিটা তিনি ভালো তোলেন, এমন একটা দাবিও করেছিলেন মনে পড়ে।

সেই সেলফি

গুচ্ছের টাকা খরচ করে ট্যাক্সি ভাড়া করে শুধু হোটেল দেখতে যাইনি। সেটাও একটা কারণ ছিল বটে, তবে আসল কারণ নয়। আগের দিন হল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের দুই বোলার তাসকিন ও আরাফাত সানির বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন দুই আম্পায়ার। সাত দিনের মধ্যে পরীক্ষায় বসে সেটিতে পাস না করলে নিষিদ্ধ হয়ে যাবেন (পরে যা সত্যিই হয়েছিলেন)। যতদূর মনে পড়ে, এই খবরটা সবার আগে প্রথম আলোতেই বেরিয়েছিল। সেটি নিশ্চিত করতেই পরের দিনের পত্রিকার জন্য অপেক্ষা না করে তড়িঘড়ি করে লিখে অনলাইনের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।

সেদিনেরই আরেকটা ছবি। দ্য প্যাভিলিয়ন হোটেলে আমার ক্যামেরাবন্দি তামিম, সাকিব ও তাসকিন। ছবি: উৎপল শুভ্র

খবরের সূত্রটাও এখন বলেই দেওয়া যায়। ম্যাচ প্রায় শেষ, অথবা একটু আগে শেষ হয়েছে। প্রেসবক্সে সাংবাদিকরা যেখানে বসেন, তার পেছনেই চা-কফির ব্যবস্থা থাকে। লেখার ফাঁকে তারই কোনো একটা আনতে গিয়ে বিসিবির ফটোগ্রাফার রতন গোমেজের সঙ্গে দেখা। রতন আমাকে ফিসফিস করে বললেন, 'একটা খবর আছে। তাসকিন আর সানির বোলিং অ্যাকশন নিয়ে মনে হয় কোনো ঝামেলা হয়েছে। এটা নিয়ে আমি আম্পায়ারদের কথা বলতে শুনেছি।' অনেক বড় খবর, কিন্তু শুধু রতনের কথার ভিত্তিতে সেটি কীভাবে করি? নিশ্চিত হতে তাই আরও কিছু ফোন-টোন করতে হলো। ম্যাচ রিপোর্ট, তামিমের ম্যাচ জেতানো অপরাজিত ৮৩, ম্যাচ দোলাচলে দুলতে থাকার সময় মাশরাফির দুর্দান্ত এক ওভার---এই সবকিছু ছাপিয়ে এটাই যে তখন বড় খবর।     

মাঝখানে একদিন, তারপরই আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে প্রাথমিক পর্বে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। এই ম্যাচের ক্রিকেটীয় প্রিভিউ লিখলে কী আর হবে! সেটি লিখতে দলের আবহটা অবশ্যই বুঝতে হবে। তা বোঝার জন্য টিম হোটেলে যাওয়া ছাড়া আর পথ কি! যাওয়াতে বাড়তি কিছু লাভও হয়েছিল। তাসকিন-সানিকে নিয়ে অস্বস্তি থাকলেও ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাসিঠাট্টা, আড্ডায় দারুণ কেটেছিল দিনটি। যথারীতি যেটির মধ্যমণি হয়ে ছিলেন মাশরাফি। এই সেলফিটাকে বলতে পারেন তারই  প্রতিচ্ছবি। টিম হোটেলে গিয়ে যে লাভের কথা বলছিলাম, এখন মনে হচ্ছে, এই ছবিটাকেও তার মধ্যে রাখতে হয়।   

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×